বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে সুখের হাসি

প্রকাশ | ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৯

মো. কামাল হোসেন, বিশ্বনাথ (সিলেট)
ছবি: যায়যায়দিন

বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে সুখের হাসি আর মনে বইছে উচ্ছ্বাস আর আনন্দ। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সিলেটের বিশ্বনাথে বোরো ধান কাটার উৎসব শুরু হয়েছে কৃষক-কৃষানীদের মনে। প্রান্তিক কৃষকেরা ভোর থেকে ধান কেটে নিয়ে এসে আধুনিক যন্ত্র দিয়ে মাড়াই দিচ্ছেন। কেউ মাড়াইকৃত ক্ষেতের ফসল গোলায় তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ মৌসুমে বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় না থাকায় বোরো উৎপাদনে বাম্পার ফলন পাওয়ার আশা করছেন কৃষকেরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ ধান উত্তোলন করতে পেরেছেন কৃষকেরা। প্রাকৃতিক অবস্থা ভালো থাকলে অন্যান্য জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন বলে কৃষকেরা জানান।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, একটি পৌরসভাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৭ হাজার ২৯৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। হাইব্রিড প্রজাতির ধানের মধ্যে রয়েছে ব্রি-ধান ৮৯, ৯২, ও ৭৪ জাতের ধান চাষ করা হয়। এছাড়া উপজেলার প্রান্তিক ও দরিদ্র কৃষকদের মাঝে এ বছর সার ও বীজ সরকারি প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। ২৪-২০২৫ অর্থ বছরে মৌসুমের শুরুতে এক হাজার ১০০ কৃষককে ২ কেজি করে ‘এসএল৮এইছ’ জাতের বোরো বীজ, ৩ হাজার ২০০ কৃষককে ৫ কেজি করে ব্রি-ধান ৮৯, ব্রি-ধান ৯২, ব্রি-ধান ৭৪ জাতের বীজ, ১০ কেজি করে ডিএপি ও এমপিও সার উপকারভোগী কৃষকদেরকে বিতরণ করা হয়েছে।

রামপাশা ইউনিয়নের কৃষক নামজুল ইসলাম জানান, এ বছর বোরো ধানে বাম্পার ফলন হয়েছে, আমি প্রায় ১৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। কিন্তু শ্রমিক সংকটে থাকায় ৭০০-৮০০ টাকা রোজে ২ জন শ্রমিক ও পরিবারের সবাইকে নিয়ে ধান কেটে ফসল গোলায় তোলার চেষ্টা করছি। ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরকারী প্রনোদনা পেয়েছি। তবে দিনের অবস্থা ভাল থাকলে অন্যান্য জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে পারব।

বিশ্বনাথ পৌরসভার দক্ষিণ মশুলা গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, এ বছর ২৪০শতাংশ জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। এবারে ভালো ফলন হয়েছে। লাভবান হবো বলে আশা করছি। আমাদের জমিতে কম্বাইন রাইস হার্ভেস্টার মেশিন নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় ৭০০-৮০০ টাকা দিনের মাইনে শ্রমিক নিয়ে ফসলী জমিতে ধান কেটেছি। আমি কখনও সরকারি প্রনোদনা পাইনি। যদি ভবিষ্যতে প্রণোদনা পাই তাহলে বোরো চাষে আরও লাভবান হবো।

কৃষক তৈমুছ আলী জানান, আমার নিজের কোন জমি নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে প্রায় ৩০০শতাংশ চাষ করেছি। জমির মালিকের ধান দিয়ে এবং খরচ পুশিয়ে তেমন একটা লাভবান হবেন না। বর্তমান বাজারে ধান প্রতি কেজি ৩৬ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। আমি কোনো সরকারী প্রণোদনা পাইনি, যদি সরকারি প্রণোদনা পেতাম তাহলে আরও লাভবান হতে পারতাম।

উপজেলার দশঘর ইউনিয়ন আব্দুর রহিম জানান, তিনি প্রায় ২১০ শতক জমিতে বোরো ধান চাষ করেন। শ্রমিক সংকটে থাকার কারণে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ফসলী জমিতে ধান কাটতে হচ্ছে। তবে সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষি কাজে মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। আমি এখনও কোন সরকারি প্রণোদনা পাইনি, সরকারি প্রণোদনা পেলে হয়তো আরও লাভবান হতাম।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে কৃষকরা আশাতীত জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। বোরো ধান বুটিং স্তরে থাকা অবস্থায় বৃষ্টিপাত হওয়ায়, ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব কমেছে এবং একি কারণে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে আগাম জাতসমূহ ব্রি-ধান৭৪, এসএল৮এইছ সহ অন্যান্য হাইব্রিড ধানের জাতসমূহ কর্তন করা হচ্ছে। আশা আছে ভালো ধান পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ভাগ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়েছে। আগামী কয়েক দিন বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় এবং বোরো ধান ৮০ ভাগ পরিপক্ক হলেই কর্তনের আহবান করেন তিনি।

যাযদি/ এসএম