বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
নিষিদ্ধ যৌন উত্তেজক সিরাপ ‘অন’ ও ‘টাচ’

দেদারছে চলছে উৎপাদন ও বিপনন, নীরব ঔষধ প্রশাসন

স্টাফ রিপোর্টার
  ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ২০:২৮
দেদারছে চলছে উৎপাদন ও বিপনন, নীরব ঔষধ প্রশাসন
ছবি: যায়যায়দিন

মানবদেহের জন্য ক্ষতির এমন প্রমাণ পেয়ে ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর পাবনার একেএল ল্যাবরেটরীজের (ইউনানী) উৎপাদিত দুটি যৌন উত্তেজক সিরাপ ‘অন ও টাচ’ এর রেজিস্ট্রেশন সাময়িক বাতিল করলেও উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পাবনাস্থ স্থানীয় ঔষুধ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে স্থগিত করা ইউনানী যৌন উত্তেজক অন ব্র্যান্ডের শরবত আঙ্গুর ও টাচ ব্র্যান্ডের আরক লাহসুন নামের দুটি সিরাপ উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করছে এমন প্রমাণ মিলে পাবনাস্থ করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিসে সরেজমিনে গিয়ে।

সরকারি নিষেধ অমান্য করে স্থানীয় ঔষধ প্রশাসন দপ্তরকে অনৈতিক পন্থায় ম্যানেজ করে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর, নকল ও ভেজাল এই যৌন উত্তেজক সিরাপ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে জেলাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

ওষুধ প্রশাসনের পাবনাস্থ কার্যালয় দাবী করছে, যৌন উত্তেজক সিরাপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের দুটি সিরাপ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে এমন কোন তথ্য আমার কাছে নেই। আর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের দাবী, আগের উৎপাদন করা সিরাপগুলো বাজারে ছাড়া হয়েছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও লাইসেন্সিং অথরিটি মেজর জেনারেল মো: শামীম হায়দার স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানা যায়, পাবনা সদরের পৌর এলাকার ছাতিয়ানীস্থ বিসিক শিল্প নগরীতে অবস্থিত মেসার্স একেএল ল্যাবরেটরীজের (ইউনানী) উৎপাদিত অন সিরাপ ১০০ এমএল শরবত আঙ্গুর ও টাচ সিরাপ ১০০ এমএল আরক লাহসুন সিরাপ নকল ও ভেজাল এমন অভিযোগ পায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গত ২৫/০৩/২০২৫ ইং তারিখে ডিজিডিএ/ইউ/১৯/১১/৮৯/৩৯৮০ স্মারকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়।

সুত্র জানায়, একেএল ল্যাবরেটরীজের পক্ষ থেকে যে কারণ দর্শানো জবাব দেয়া হয় তা গ্রহণযোগ্য নয়। একই সাথে তারা নকল ও ভেজাল প্রমাণে ব্যর্থ হয়। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অভিযুক্ত ২ টি সিরাপ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নকল ও ভেজাল প্রমাণ পায়। এর ভিত্তিতে গত ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ইং তারিখে অভিযুক্ত সিরাপ দুটির রেজিষ্ট্রেশন ২০২৩ সালের ২৫(২) ধারা ও একই আইনের ২৫(৪) ধারা অনুযায়ী সাময়িক স্থগিত করেছে। একই সাথে ওই দুই সিরাপ উৎপাদন ও বাজারজাত করা যাবে না বলে নির্দেশ প্রদান করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান মেসার্স একেএল ল্যাবরেটরীজ তাদের উৎপাদিত অবৈধ ও ভেজাল সিরাপ অন ও টাচ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ অব্যাহত রেখেছে। পাবনায় কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বাতিল করা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এই সিরাপ উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাতে পাঠানো হচ্ছে। স্থানীয় ঔষধ প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়ে এ ধরণের কর্মকাণ্ড চললেও অজ্ঞাত কারনে ঔষধ প্রশাসন কর্মকর্তারা নিশ্চুপ রয়েছেন।

মঙ্গলবার দুপুর দুইটার দিকে করতোয়া কুরিয়ারের পাবনা বুকিং অফিসে গিয়ে এর সত্যতা মেলে। বিপুল পরিমান কার্টুন বুকিং করা হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাতে। কুরিয়ার সার্ভিসের ম্যানেজারকে পাওয়া না গেলেও বুকিংয়ে থাকা কর্মিরা জানান, নিয়মিত মাল হিসেবেই এগুলো বুকিং নেয়া হয়েছে। আর কোনটা বাতিল কোনটা সঠিক এমন কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। ওই কোম্পানীর সাথে কথা বলে আমরা আরও নিশ্চিত হতে পারবো।

এ ব্যাপারে মেসার্স একেএল ল্যাবরেটরীজের সত্ত্বাধিকারী মোঃ রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন দুটি সিরাপ সাময়িক স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আগের উৎপাদিত সিরাপগুলোই বাজারজাত করা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা থাকার পর কিভাবে এই সিরাপ বাজারজাত করছেন এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদ্যুত্তর দিতে পারেননি।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর পাবনা জেলা কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম জানান, কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়ার বিষয়টি আমি জানি। কিন্তু পরবর্তী কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সেটা আমার জানা নেই। পরবর্তী নির্দেশনার কপি হাতে পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে