কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কিশোর গ্যাং সদস্যদের দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে মহড়ায় একটি ভিডিও এবং তুচ্ছ ঘটনায় একই গ্রæপের সদস্যদের হাতে মারধরের শিকার হওয়া মাদ্রাসা ছাত্রের আরেকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি ঘিরে পুরো উপজেলায় চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা।
ভিডিওর ঘটনাস্থল উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের করপাটি গ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় আতংক ছড়িয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের করপাটি দক্ষিণপাড়ার রিপন মিয়ার ছেলে সিয়াম ও সিয়াতের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাংয়ের একটি টিম বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে।
সিয়াম স্থানীয় মরকটা মাদ্রাসার আলিম প্রথম বর্ষের ছাত্র। অপর ভিডিওটিতে দেখা যায়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাং লিডার সিয়াম ও পাশ^বর্তী ছোটখিল গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে আরমানের নেতৃতে মরকটা মাদ্রাসার আলিম প্রথম বর্ষের ছাত্র সায়মনের উপর হামলা করে। ভিডিওতে দেখা যায়, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সায়মনকে এলোপাথাড়ি কিল, ঘুটি, লাথি মারছে। ঘটনায় অংশ নেয়া কিশোর গ্যাংয়ের অন্য সদস্যরা হলো; করপাটি দক্ষিণপাড়ার আব্দুল হালিমের ছেলে মুন্না, বাতিসার ডলবা গ্রামের রাহাত, নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসিয়ারার বাবলু। বাবলু নানার বাড়ি করপাটি দক্ষিণপাড়ায় বসবাস করে।
এদিকে কিশোর গ্যাং লিডার সিয়াম, সিয়াতের বিরুদ্ধে মরকটা মাদ্রাসার আরেক ছাত্র জোবায়ের তোহাকে ছুরিকাঘাতে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ, ২০২২ সালে পাশ^বর্তী বৈলপুর গ্রামের শিবিরকর্মী মাজহারুল মুন্নাকে মারধরসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। মরকটা, করপাটি এলাকার স্থানীয়রা জানায়, মরকটা আলিম মাদ্রাসা ছুটির পর এদের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং ও বখাটেরা মেয়েদের ইভটিজিং করে। তাদের সাথে অস্ত্র থাকায় মাদ্রাসার শিক্ষক এবং স্থানীয়রা বাঁধা দেয়ার সাহস পায় না। স্থানীয়রা আরও জানায়, করপাটি দক্ষিণপাড়ার কিশোর গ্যাং সদস্যদের অধিকাংশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ৫ই আগষ্টের আগেও তারা বিভিন্ন ঘটনা করে এলাকায় আতংক বিস্তার করতো। এখনো তারা নিয়মিত মহড়া দিয়ে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করছে।
ভাইরাল ভিডিওতে মারধরের শিকার হওয়া মাদ্রাসা ছাত্র সায়মন মঙ্গলবার (২৯শে এপ্রিল) বিকেলে বলেন, গত রবিবার কোন কারণ ছাড়াই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা শাহ ফখরুদ্দিন সড়কের করপাটি দক্ষিণপাড়া অংশে তার উপর আতর্কিত হামলা করে।
কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার অপর মাদ্রাসাছাত্র জোবায়ের জানান, সিয়াম, সিয়াতের নেতৃত্বে আমার উপর ছুরি দিয়ে হামলা করা হয়। আমার গলায় এখনো ছুরির দাগ রয়েছে।জোবায়েরের পিতা জিয়াউল হক জানান, আমার ছেলের উপর হামলার ঘটনায় পরে সামাজিকভাবে বিচার শালিষ বসে। এতে অভিযুক্তরা আর্থিক জরিমানা ও মাফ চায়।
মরকটা ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা কবির আহাম্মদ বলেন, গত রবিবারের ঘটনাটি সত্য। আমি লোক মারফত জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ছেলে কিংবা তার অভিভাবক কেউ অভিযোগ নিয়ে আসে নাই। এই বিষয়ে মাদ্রাসার একজন শিক্ষককে বিস্তারিত জেনে অবহিত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন জানান, কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। অভিযুক্তদের অনেকের অভিভাবক এলাকায় বিচার শালিষ করে কিন্তু তাদের সন্তানরাই এসব অপরাধের সাথে জড়িত।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন জানান, অস্ত্রনিয়ে ভিডিও ও মারধরের দুইটি ভিডিও আমাদের নজরে এসেছে। এতে অংশ নেয়া কিশোরদের শনাক্ত করে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জামাল হোসেন জানান, কিশোর গ্যাংয়ের অস্ত্র নিয়ে ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রæত আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।