মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

ঈদগাঁও নদী বাঁচাতে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার

দখল, দূষণের থাবায় বিষাক্ত ও দূর্গন্ধময় জলাশয়
ঈদগাঁও (কক্সবাজার)  প্রতিনিধি
  ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৬
ঈদগাঁও নদী বাঁচাতে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার
ছবি: যায়যায়দিন

এক সময়ের প্রমত্তা ও চলমান নদী কক্সবাজারের ঈদগাঁও নদী আজ হারিয়ে ফেলেছে তার স্রোত, সৌন্দর্য ও প্রাণচাঞ্চল্য। দখল ও দূষণের থাবায় ঐতিহাসিক এ নদীটি পরিণত হয়েছে এক বিষাক্ত ও দূর্গন্ধময় জলাশয়ে।

স্থানীয়রা জানান, ঈদগাঁও বাসস্ট্যান্ডের আশপাশের ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত নদীতে ফেলছেন নানা প্লাস্টিক, শিল্পবর্জ্য ও বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত আবর্জনা। এতে নদীর পানি হয়ে উঠেছে ঘন কালো। আর বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে অসহনীয় দূর্গন্ধ।

নদীর আশপাশের মানুষজন বলছেন, এক সময় এ খালের পানি দিয়ে তারা রান্না-বান্না থেকে শুরু করে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতেন। নদী দিয়ে চলত নৌযান, দুই পাড়ে ছিল কর্মচাঞ্চল্যে ভরা জনজীবন। কিন্তু এখন ঐসব যেন কেবলই এক ম্লান স্মৃতি।

ঈদগাঁও নদী শুধু একটি পানি প্রবাহ নয়, এটি এ জনপদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভূক্তভোগীদের মতে, নদীটির এ করুণ পরিণতির জন্য দায়ী অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্য ফেলা, অবৈধ দখল এবং যথাযথ তদারকির অভাব।

সাবেক জনপ্রতিনিধি নুরুল ইসলাম খরস্রোতা এ নদীর বর্তমান অবস্থায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সময় মতো পদক্ষেপ না নিলে ঐতিহাসিক এ নদীটি চিরতরে হারিয়ে যাবে। কিন্তু প্রাচীন এ নদীটি এলাকার মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত রয়েছে।নদী দখল, দূষণ ও অবৈধ বালি উত্তোলন রোধে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। স্মৃতি বিজড়িত এ নদী পুনরুদ্ধার এখন সময়ের দাবি। পরিবেশ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনায় দখলদারদের উচ্ছেদ ও নদী খননের দাবি জানিয়েছেন এ প্রতিনিধি।

সরজমিন দেখা যায়, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাঁও ব্রিজ ও তার আশপাশ, পাল পাড়া, বাঁশঘাটা, চর পাড়া, হিন্দু পাড়াসহ অধিকাংশ এলাকায় খালের বুক দখল করে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। সেই সাথে অবৈধ বালি উত্তোলন যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা-তে পরিণত হয়েছে।

নদীর পাড়ের লোকজন জানান, মৃতপ্রায় এ নদী রক্ষায় এখনই প্রয়োজন প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা। সাথে প্রয়োজন পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।

স্থানীয় পরিবেশবাদী ও সচেতন মহাল বলছেন, ঈদগাঁও নদী দখল ও দূষণের মাধ্যমে যেভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। এটি কেবল পরিবেশ দূষণ নয়। জনস্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও হুমকি স্বরূপ। দখলদারদের বিরুদ্ধে মানুষকে পরিবেশ রক্ষায় আরও সচেতন হতে হবে।

ঈদগাঁও নদীকে বাঁচাতে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি জীবন্ত জলাধার উপহার দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলাবাসী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে