গাজীপুরে গণপিটুনির শিকার মসজিদের ইমাম কারাগারে মারা গেছেন

প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ২০:৩১ | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ২০:৩৮

গাজীপুর প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

গাজীপুর মহানগরীর পূবাইলের হায়দরাবাদ এলাকায় একাধিক শিশু—কিশোরকে বলাৎকারের অভিযোগে গাছের সাথে বেধে জুতার মালা পরিয়ে মারধর করা ইমাম কারাগারে মারা গেছেন। রোববার (২৭ এপ্রিল) দিনগত রাত ৩টার দিকে গাজীপুর জেলা কারাগারে তার মৃত্যু হয়।

নিহত রহিজ উদ্দিন খোকন (৩৫) চাঁদপুর মতলব থানার মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে। তিনি হায়দরাবাদ আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে কাজ করতেন। গাজীপুর মহানগরীর ঝাজড় এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।

সোমবার সকালে মর্গের সামনে গিয়ে দেখা যায় নিহত রহিজ উদ্দিন খোকনের মা, স্ত্রী, ছোট বোনসহ অন্যান্য স্বজনরা বিলাপকরে কান্না করছেন। তাদের সাথে কথা বল্লে জানা যায়, পরিবারের একমাত্র উর্পাজন ক্ষম ব্যাক্তি ছিলেন রহিজ উদ্দিন খোকন। স্ত্রী, ৮ বছরের এক কন্যা সন্তান এবং মাকে নিয়ে ছিল রহিজ উদ্দিনের পরিবার। ছোট বেলায় বাবার মারা যাওয়ার পর ঢাকার একটি এতিমখানায় লেখাপড়া করেন রহিজ উদ্দিন খোকন। পরিবারের উপার্জন ক্ষম কেউ না থাকায় দুশ্চিন্তর ভাঁজ কাপালে রহিজ উদ্দিন খোকনের মায়ের কপালে। রোববার রাতেও রহিজ উদ্দিনের মেয়েটি দাদীর কাছে গিয়ে বলেছিল তার বাবা কাল বিস্কুট নিয়ে আসবে। যদি রহিজ উদ্দিন অপরাদ করেও থাকে তাহলে স্থানীরা কেন আইন নিজের হাতে তুলে নিলো। পরিবারের কাছে বলতো অথবা চাকুরী থেকে বাদ দিত।

রহিজ উদ্দিনের স্ত্রী সাজেদা বেগম বলেন, মসজিদে দুুইটি পক্ষ রয়েছে। তাদের বিরোধ চলছিল। রহিজ উদ্দিন খোকন ছিলেন সুন্নি এবং যার মাধ্যমে ওই মসজিদে নিয়োগ হয় সেও সুন্নি। কিন্তু ওই এলাকার অধিকাংশ মানুষ আহলে হাদিস অনুসারী। তাই তারা রহিজ উদ্দিন খোকনের ওয়াজ পছন্দ করতেন না। তাই চক্রান্ত করে মারধ করা হয়েছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পূবাইল থানার ওসি এসএম আমিরুল ইসলাম জানান, ছেলে শিশু ও কিশোরদের ধর্ষণের অভিযোগে রোববার সকালে স্থানীয়রা হায়দরাবাদ আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব রহিজ উদ্দিনকে আটক করে গাছে বেঁধে গণপিটুনি দেয়। এসময় এলাকাবাসী তার গলায় জুতার মালা দিয়ে ব্যাপক মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ইমাম রহিজ উদ্দিনকে এলাকাবাসীর কাছ থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে নির্যাতিত এক কিশোরের বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়েরর পর গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে রাতেই গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। রাত ৩টার দিকে তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সোমবার সকালে মরদেহ ওই হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়।

গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার রফিকুল কাদের জানান, রহিজ উদ্দিনের শরীরে পাবলিক অ্যাসল্টের চিহ্ন ছিল। রাত ৩টার দিকে তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের সঙ্গে ইমাম রহিজ উদ্দিন চলাফেরা করতেন বেশি। ছেলেদের ডেকে নিয়ে তার থাকার ঘরে কম্পিউটার এবং মোবাইলে গেইমস খেলতে দিতেন ও বোতলজাত পানীয় পান করাতেন। ওই পানীয় পান করার পর তারা অচেতন হয়ে পড়লে রহিজ উদ্দিন তাদের বলৎকার করতেন। সম্প্রতি কলেজের এক ছাত্রকে রাতে ইমাম রহিজ উদ্দিন ঘুমাতে ডেকে নিয়ে যান। পরে ওই ছাত্রকে একটি কোমল পানীয় পান করতে দেন। ওই পানীয় পান করার পর ওই কলেজছাত্রের মাথা ঘুরাতে থাকে। 

পরে তিনি কৌশলে ঘর থেকে বের হয়ে তার পরিবারকে ফোনে বিষয়টি জানান। বিষয়টি জানাজানি হলে রোববার সকালে এলাকার লোকজন রহিজ উদ্দিনকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের সোপর্দ করে। ওই ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।