সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

বিয়ের চাপে স্ত্রী-সন্তানসহ তিনজনকে টুকরো টুকরো করে শিমুল!

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
  ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:১৮
বিয়ের চাপে স্ত্রী-সন্তানসহ তিনজনকে টুকরো টুকরো করে শিমুল!
ছবি: যায়যায়দিন

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মোবাইল রিচার্জ কার্ডের সূত্র ধরে ট্রিপল মার্ডারের রহস্য উদঘাটন ও মূল ঘাতক মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুল (৩১)কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিহতরা হচ্ছে বিথী আক্তার (২৪), তার সন্তান রাফসান (৪) ও পাশের রুমে ভাড়াটিয়া নুপুর (২৫)। সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় সংবাদ সম্মেলনে কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত ২৫ এপ্রিল রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগরে মাকসুদা গার্ডেন সিটির সামনে থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় নূপুরের মস্তক ও হাত-পা বিহীন খন্ডিত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

২৭ এপ্রিল হাসনাবাদ নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পোস্তগোলা ব্রিজের পূর্ব দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীর সংলগ্ন ভাসমান অবস্থায় মৃতদের তিনটি খন্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়। এই খন্ডিত অংশের মধ্যে ছিল একটি পা ও দুইটি উরু। পরে ঘটনাস্থলের পাশের একটি সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সহিত সরাসরিভাবে জড়িত মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুলকে রাজধানীর জুরাইন রেললাইন এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে যে নিহত বিথী আক্তার তার কারখানায় চাকরি করতো। চাকরির সুবাদে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তার সাথে ২০১৭ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোন তিনি। বিষয়টি তার প্রথম স্ত্রী রুমা জানতে পারলে সে পুনরায় বিথী আক্তারের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এতে বিথী আক্তার রুবেল নামে অন্য একটি ছেলেকে বিয়ে করে। ওই ঘরে তার রাফসান নামে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। ঘাতক মহিউদ্দিন হাওলাদার শিমুল পরে জানতে পেরে আবারো বিথীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং তাকে বিয়ে না করেই স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে মীরেরবাগ এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তার সাথে সংসার করতে থাকে।

মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুল তার প্রথম স্ত্রী রুমাসহ রাজধানীর কদমতলী থানার জুরাইনে একটি বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন। এই ঘটনাটি পরে তার প্রথম স্ত্রী আবার জানতে পেরে তার সাথে বিভিন্ন সময় ঝগড়া বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এদিকে বিথী শিমুলকে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এমতো অবস্থায় ২৫ এপ্রিল সকালে শিমুল বিথী আক্তারের বাসায় চলে আসে।

এসময় তাদের মধ্যে ব্যাপক ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে মহিউদ্দিন হাওলাদার শিমুল গামছা দিয়ে বিথীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার ঘটনাটি দেখে ফেলায় বিথীর শিশু সন্তান রাফসানকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সে। এসব ঘটনা দেখে ফেলে ওই ফ্ল্যাটের সাবলেটে প্রতিবেশী নুপুর চিৎকার করলে তাকেও গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সে। পরে মৃতদেহ গুলো বাথরুমে নিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে বিভিন্ন প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে সে। রাফসানের ছয় টুকরা লাশ বস্তা বন্দি করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বেয়ারা এলাকায় একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে দেয়। নুপুরের খন্ডবিখন্ড লাশ রাতে মাকসুদা গার্ডেন সিটির সামনে ফেলে দেয়। বিথীর খণ্ড বিখন্ড বস্তা বন্দী লাশ বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর উপর থেকে নদীতে ফেলে দেয়।

পরে স্বাভাবিক অবস্থায় সে তার জুরাইনের বাসায় চলে যায়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রবিবার দিনগত রাতে শিশুপুত্র রাফসানের ৬ টুকরো করে লাশ বেয়ারা পূর্বপাড়া মিন্টু মিয়ার জমির ঝোপঝাড়ের মধ্য থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে বিথী ও নুপুরের মস্তক এখনো উদ্ধার করা যায়নি।সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মাজহারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে