মাকে কুপিয়ে খুন করে ছেলে, আদালতে স্বীকারোক্তি

প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:৫৬

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

পটুয়াখালী সদর উপজেলার বড়বিঘাই ইউনিয়নে মাকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে খোকন হাওলাদার ওরফে ইউসুফ (৩৭) নামে এক ছেলেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে পারিবারিক কলহ সহ বেশ কিছু কারন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে দক্ষিণ বিঘাই গ্রামের নিজ বাড়িতে রিজিয়া বেগম (৫৫) নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ঘটনার সময় রিজিয়া বেগম তার স্বামীর ঘরে ইফতারের পর তারাবির নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই সময় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই মোঃ শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে পটুয়াখালী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-১৫/১২৬, তারিখঃ ১১-০৩-২০২৫) দায়ের করেন। মামলার পরপরই জেলা পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত শুরু করে।

তদন্তে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নিহতের বড় ছেলে মোঃ খোকন হাওলাদার ওরফে ইউসুফ। পরে গত ২৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখ রাত ১১টা ১০ মিনিটের দিকে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন টিআইসি গেইট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ভারী কাঠের তক্তা ও একটি লোহার দা জব্দ করা হয়।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মোঃ খোকন হাওলাদার জানান, পারিবারিক কলহ সহ বিভিন্ন কারনে মায়ের প্রতি ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভ থেকেই তিনি পরিকল্পিতভাবে মাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।

গ্রেফতারকৃত খোকন হাওলাদার জানান, ঘটনার একদিন আগে তিনি গাজীপুর থেকে পটুয়াখালী রওনা দেন। ইফতারের পর নিশ্চিত হয়ে যে তার বাবা বাড়িতে নেই, তিনি ঘরে প্রবেশ করে প্রথমে কাঠের তক্তা দিয়ে মায়ের মাথায় আঘাত করেন। প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তার মায়ের হাত ভেঙে যায়। পরে উপর্যুপরি আঘাতের মাধ্যমে হত্যা নিশ্চিত করেন এবং দা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক কোপ দেন। পরে মোঃ খোকন হাওলাদারকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল বলেন, "ঘটনার পরপরই জেলা পুলিশের একাধিক টিম ধারাবাহিকভাবে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত পরিচালনা করে। অবশেষে হত্যার মূল অভিযুক্ত মোঃ খোকন হাওলাদারকে গ্রেফতার করা হয়। আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আমরা তদন্তের আওতায় খতিয়ে দেখছি এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা। কেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।"

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ ঘটনার জড়িতদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।