রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

ফুলবাড়ীতে শুরু হয়েছে বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৩১
ফুলবাড়ীতে শুরু হয়েছে বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা
ছবি: যায়যায়দিন

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে শুরু হয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা। এ মেলায় দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ঘোড়া নিয়ে এসেছেন ঘোড়া ব্যবসায়ীরা। মেলাকে কেন্দ্রকরে পরসা সাজিয়ে বসেছে হরেক রকম প্রসাধনী মিঠাই মিষ্টান্নসহ মুখোরচক খাবারের দোকান, শিশুদের জন্য চাক-চক্র ও খেলনার দোকান। দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখোরিত হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুর ১ টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের মেলাবাড়ী এলাকায় এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এরপরই ঘোড়া বেচাকেনার জন্য (রশিদ) ছাপা বের হয়।

সরেজেমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘোড়ার মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা। গ্রামীন এ মেলায় পরসা সাজিয়ে বসেছে হরেক রকম মুখোরচক খাবারের দোকান,কসমেটিক্সের দোকান ও শিশুদের জন্য খেলনার দোকান। মেলায় আগতদের বিনোদনে জন্য দোলনা, নাগরদোলা, সার্কাস ও খেলাধূলার আয়োজন করা হয়েছে।

এতে সব বয়সি নারী-পুরুষের ব্যাপক সমাগম ঘটছে। দর্শনার্থীদের মধ্যে পুরুষের পাশাপাশি কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণিদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ করা গেছে।

এদিকে ঘোড়া বিক্রি করতে আসা ঘোড়া ব্যাবসায়ীরা মেলায় সারিসারি করে ঘোড়া বেধেঁ রেখেছেন। তার পাশেই ছোট ছোট তাবু টাঙানো হয়েছে রাত্রী যাপনের জন্য। কেউ রান্না করছেন, কেউ আবার ঘোড়ার পরিচর্যা করছে।

মেলা কমিটির সভাপতি শিক্ষক আফতাবুজ্জামান জানান, প্রতি বছর বাংলা বছরের বৈশাখ মাসের ১৩ তারিখ থেকে ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের মেলাবাড়ী মাঠে এই ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা বসে। মেলাটি অন্তত ১৫ দিন স্থায়ী হয়। তবে এ মেলায় ঘোড়াই মূলত বেচাকেনা হয়ে থাকে।

এ কারণে এটি বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা নামেই দেশব্যাপী পরিচিত। রংপুরের তারাগঞ্জ থেকে ঘোড়া নিয়ে আসা জাহাঙ্গির শাহ, জয়পুরহাটের ওহাব আলী, হাকিমপুর উপজেলার জাহের আলী, বিরামপুর উপজেলার ওসমান আলী এ মেলায় এসেছেন ঘোড়া বিক্রি করতে। তারা বলেন, একএকজন ছোটবড় মিলিয়ে ৪-৫ টি করে ঘোড়া নিয়ে মেলায় এসেছেন। তারা আকার ভেদে ঘোড়ার দাম রেখেছেন সর্বনিম্ন ২০ হাজার থেকে ১লক্ষ টাকা।

এরমধ্যে ২-১ হাজার টাকা কমবেশি হতে পারে। সারাবছর দেশের বিভিন্নস্থানে ঘোড়ার মেলায় ঘোড়া নিয়ে যান বেচাবিক্রি করতে। ঘোড়া বেচাকেনা করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে মেলায় এবার ঘোড়ার ক্রেতার অভাব রয়েছে বলে জানান ঘোড়া ব্যবসায়ীরা, এজন্য বেচাবিক্রিও কম হচ্ছে।

নওগাঁও থেকে আসা ঘোড়া ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, দুদিন হলো ছোটবড় ৫ টি ঘোড়া নিয়ে মেলায় এসেছেন। ক্রেতারা দাম কম বলছেন, তাই এখন পর্যন্ত একটিও ঘোড়া বিক্রি করতে পারেননি। তিনি ১৯৯০ সাল থেকে এই মেলায় ঘোড়া বেচবিক্রি করে আসছেন।

আলাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মেলাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দছিম উদ্দিন মন্ডল বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলাটি ব্রিটিশ আমল থেকে হয়ে আসছে, তিনি তার আমাদের বাপদাদাদের মুখ থেকে এ মেলার গল্প শুনেছেন। দেশব্যাপী ব্যাপক পরিচিত এ মেলা। ঘোড়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই এই মেলা শুরু এবং শেষ হওয়ার তারিখ জানেন। এ কারণে প্রতিবছর মেলা শুরুর আগেভাগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘোড়া বেচাকেনা করতে মেলায় আসেন।

থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম খন্দকার মহিব্বুল বলেন, এটি এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার মেলা। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ঘোড়া ব্যবসায়ীরা এসেছেন। মেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় পুলিশ সার্বক্ষনিক নজরদারি রাখছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসাহাক আলী বলেন, সুষ্ঠ ও সুন্দর পরিবেশে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত এই ঘোড়ার মেলায় কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে। সেদিকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক নজরদারি করছে।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে