অভিযোগ গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে
হাতিয়ায় জেলেদের ত্রাণের চাল আত্মসাত
প্রকাশ | ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩১ | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫০

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমান অসংখ্য জেলের কার্ড (পরিচয়পত্র) নিজে নিয়ে রেখেছেন। সেই কার্ডের নিয়মিত ত্রাণের চাল উত্তোলনও করতেন। দু’একজনকে মাঝে মধ্যে দেওয়া হতো ওই চালের অংশ। এ জন্য কাউকে ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার প্রয়োজন হতো না। নিজ দায়িত্বে চাল বাড়ী পৌঁছে দিতেন ।
এই ভাবে দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে এই অপকর্ম চালিয়ে আসছেন তিনি। আর এ অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ নোয়াখালী হাতিয়ার চরঈশর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে স্থানীয় জেলেদের।
সরকার বদলের পর বহু জেলে কার্ড ফেরৎ পেলেও অনেক অসহায় জেলেকে এখনো তার পিছনে পিছনে ঘুরতে হচ্ছে। সম্প্রতি এক বস্তা ত্রাণের চাল এনে বাংলাবাজারের একটি চায়ের দোকানে রাখেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে নিবন্ধীত অনেক জেলে এসে সেই চালের মালিকানা দাবি করেন। তাতে দেখা দেয় বিপত্তি। পরে বাজারের ব্যবসায়ীরা এসে সেই চাল জব্দ করে চৌকিদারকে সংবাদ দিলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
এ বিষয়ে জানতে সংবাদকর্মীরা বাংলাবাজার গেলে অনেকে এসে গ্রাম পুলিশের ব্যাপারে অভিযোগ দেন। এদের মধ্যে একজন চরঈশ্বর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের জাকের হোসেনের ছেলে মো. বেলাল উদ্দিন জানান, ২০১৬ সালে তার নামে জেলে কার্ড করার পর চার কিস্তির চাল পেয়েছে। পরে চেয়ারম্যানের কথা বলে কার্ডটি গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমান তার কাছ থেকে নিয়ে যায়। প্রায় ৯ বছর পর ৫ আগষ্ট সরকারের পটপরিবর্তন ঘটলে গ্রাম পুলিশ তার কার্ডটি তাকে ফেরৎ দেয়। কিন্তু ৯ বছর ধরে তিনি কোন চাল পাননি বলে জানান।
একই ওয়ার্ডের জেলে পল্লীর বাসিন্দা লোটন চন্দ্র দাসের স্ত্রী ঝুমকু রানী দাস বলেন, স্থানীয় গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমান প্রায় ৩ তিন বছর আগে তার কাছ থেকে জেলে কার্ড দেয়ার কথা বলে নিয়ে যায়। অনেক অনুরোধ অনুনয় করার পরেও সে কার্ডটি ফেরৎ দেয় নাই। কিছুদিন পূর্বে তিনি কার্ডটি ফেরৎ দিলেও গত ৩ বছর কেন কার্ডটি ফেরত দেন নি তার কোন উত্তর দিতে পারেন নি।
একইভাবে মৌলভী গ্রামের মৃত মোবাশ্বর আহমদের ছেলে কাউসার উদ্দীন বলেন, ২০১৪ সালে তার নামে জেলে কার্ড হওয়ার পর মিজানুর রহমান অফিসের কথা বলে কার্ডটি নিয়ে যায়। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে অনেক খোজাখুজি করেও তার কার্ডটি পাওয়া যায়নি। প্রায় এগারো বছর পর গত মাসে ( মার্চ ২০২৫) সে তাকে কার্ডটি ফেরৎ দেয়। খোজ নিয়ে দেখেছেন বিভিন্ন সময় তার নামের কার্ড দিয়ে সে চাল উত্তোলন করে নিজেই আত্মসাৎ করেন।
মৌলভী গ্রামের মৃত আবদুল মোতালেবের ছেলে মো. দুলাল উদ্দিন বলেন, দুই বছর আগে তার কার্ডটি গ্রাম পুলিশ নিয়ে যায়। সরকার পরিবর্তনের পর চাপ প্রয়োগ করলে দুই কিস্তি তাকে দুই বস্তা চাল বাড়িতে এনে দিয়ে যায়। গত মাসে একবস্তা চাল এনে বাজারে একটি চায়ের দোকানে রাখেন। যা পরে এলাকার লোকজন এসে জব্দ করে।
বাংলা বাজারের কয়েকজন ব্যবসাযী জানান, বিভিন্ন সময় মিজানুর রহমান ভ্যান গাড়িতে অনেক গুলো চালের বস্তা নিয়ে আসতেন বাজারে । মাঝে মধ্যে দুএক বস্তা কাউকে কাউকে দিলেও বেশির ভাগ তার বাড়ীতে নিয়ে যেতেন। মানুষ ত্রাণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে প্রতিবাদ করতেন না। এখন মানুষের মধ্যে ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটেছে। অনেকে তার বাড়িতে গিয়ে তাদের কার্ড ফেরত পাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমানের বাড়ীতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে চরঈশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আজাদ জানান, নিবন্ধীত ও জেলে কার্ড ছাড়া কাউকে চাল দেওয়া হয় না। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে বাংলাবাজার অনেক দুরে হওয়ায় অনেকে তাদের কার্ড দিয়ে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে চাল নিয়ে যান। এই সূযোগে গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমান এসব অনিয়ম করেন। অভিযুক্ত গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ এসেছে। কয়েকটি অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেছে। এজন্য তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।'