বৈশাখের খরতাপে পুড়ছে যশোরের প্রাণ-প্রকৃতি
প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:৩৫ | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:৫৩

বৈশাখের খরতাপে পুড়ছে যশোরের প্রাণ ও প্রকৃতি। অব্যাহত তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের আগুনে পুড়ছে যশোর। এর মধ্যে দু’দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। এর আগে চৈত্রের শেষভাগেও বেশ কয়েকদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করেছে যশোরে।
বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস যশোরে রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল যশোরে। আর বৃহস্পতিবার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরেই যশোরে মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এই অবস্থা আরও কয়েকদিন বিরাজ করতে পারে।
যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণাধীন আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার যশোরে সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে বুধবার বিকেল তিনটার পর এই জেলায় সর্বোচ্চ ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
মঙ্গলবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো যশোরে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিন ধরেই বৈশাখের এই খরতাপে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর আগে চৈত্রের শেষভাগেও খরতাপে একাধিক দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। এর মধ্যে ২৮ মার্চ তাপমাত্রার পারদ চড়েছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ওই সময় টানা তিনদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে রেকর্ড করা হয়।
এদিকে, যশোরে মাঝারি তাপপ্রবাহে গোটা প্রাণ-প্রকৃতি দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে দুপুরের দিকে রাস্তা, ঘাট, ফসলের ক্ষেতে মরুর উত্তাপ বিরাজ করছে। ঘরের বাইরে বের হলেই আগুনের হল্কা গায়ে লাগছে। শ্রমজীবী মানুষ রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সূর্যের তাপ এতই বেশি যে, খোলা আকাশের নিচে হাঁটলেও গরম বাতাস শরীর ঝলসে যাচ্ছে।
যাত্রাপথে ছাতা মাথায় দিয়ে তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকেই। স্বস্তি পেতে শ্রমজীবী মানুষ রাস্তার পাশে জিরিয়ে নিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ হাতে মুখে পানি দিয়ে ঠান্ডা হওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউবা শরবত, আখের রস, স্যালাইন পানিতে শরীর শীতল করার চেষ্টা করছেন।
যশোর শহরের লালদীঘিপাড়ে আখের রস বিক্রি করছেন কালাম হোসেন। তিনি জানালেন, প্রচন্ড গরমে অনেক মানুষ আসছে আখের রস খেতে। কিন্তু রস বিক্রি করতেও রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না। ছায়া খুঁজে দাঁড়িয়ে রস বিক্রি করতে হচ্ছে।'
যশোর শহরতলী শেখহাটি তমালতলা এলাকার রিকশাচালক জাহিদ হোসেন বলেন, প্রচন্ড গরমে গায়ে যেনো আগুনের তাপ লাগছে। একটু রিকশা চালালেই ঘামে গা ভিজে যাচ্ছে। গরমে মাথা ঘুরছে। দড়াটানা এলাকায় রিকশাচালক হোসেন মিয়া বলেন, গরমে রিকশা চালালে গায়ে যেনো আগুনের ছ্যাকা লাগছে।
তারপরও রিকশা চালাতে হচ্ছে। কিন্তু ঠিকমত ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। গরমে বাইরে মানুষ কম আসছে। দড়াটানা চৌরাস্তা থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া নিয়ে গেলেও খালি ফিরে আসতে হচ্ছে। যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।
চলমান তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বিপাকে পড়া শ্রমজীবী মানুষ তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে মাথায় টুপি অথবা গামছা পরে চলাচল করছেন।
কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা ক্লান্ত দেহ নিয়ে ছায়ায় বিশ্রাম করছেন। গরমের হাত থেকে শরীরকে শীতল করে জুড়িয়ে নিতে শহর থেকে কিশোর-যুবকেরা দল বেঁধে ছুটছে গ্রামাঞ্চলে নলকূপগুলোতে গোসল করতে। এদিকে সাধারণত মধ্য এপ্রিলে তীব্র তাপদাহ বয়ে যায় যশোরে। তবে এবার মার্চেই যশোরে সেই তাপদাহ শুরু হয়েছে। ফলে এবারের গরমে ভোগান্তির মাত্রা বাড়বে বলেও শঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত বছরের ৩০ জুনে যশোরে ব্যারোমিটারের পারদ চড়েছিল ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ১৯৭২ সালে ১৮ মে। সেদিন রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিলো ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।