কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদী হয়ে মহেশখালী দ্বীপের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার । স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত একমাত্র যাতায়াত ছিল ইঞ্জিল চালিত বোট । ২০০৭ সালে মহেশখালীর উত্তরে শেষ প্রান্তে তৈরী চকরিয়া বদরখালীয় ইউনিয়নের সাথে লাগোয়া সেতু যা রোডস এন্ড হাইওয়ের অর্থায়নে নির্মিত হয়, এতে উত্তর মহেশখালী কিছুটা স্বস্তি আসলেও কক্সবাজার সদরে যেতে প্রায় ৮০ কিলোমিটার সড়ক পথে কক্সবাজার সদরে যেতে হয় ।
ঝড় বৃষ্টির দিনে দ্বীপের মানুষের যাতায়াত প্রায় বিপদজনক হওয়ার পরও জীবনের তাগিদে যাতায়াতে বাধ্য হয় । নানান সিন্ডিকেটের পায়ে পিস্ট হয়ে জনগণকে জিম্মি করে কিছু রাগববোয়ালদের পকেট ভারী করার জন্য উন্নত যানবাহন যেন যুক্ত করতে না পারে নানান মামলা করে বন্ধ করেছে বড় যানবাহন ।
স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত দ্বীপের মানুষের দাবী পুরণ করেছে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার । দ্বীপের মানুষের উচ্ছ্বাস উদ্ধীপনা প্রসংসায় ভাসছেন বর্তমান সরকার, সবার একটি প্রশ্ন দ্বীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের সিন্ডিকেটের কালো হাত কোন সরকার ভাঙতে না পারলেও বর্তমান সরকার তা পেরেছে । বর্তমান সরকারের প্রতি আস্থা বেড়েছে দ্বীপবাসীর।
বৃহস্পতিবার ২৪এপ্রিল সকাল সোয়া ১১ টায় কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে সি-ট্রাক চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নৌপরিবহণ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
এরপর সিট্রাকটি ১১ টা ২৫ মিনিটের দিকে মহেশখালী দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং মহেশখালী জেটিঘাটে ৩০ মিনিটে পৌঁছে। এসময় জেটি ঘাটে উচ্ছ্বসিত মহেশখালী জনতার উপস্থিতি অতিথিদের মুগ্ধ করে ।
ভাড়া নির্ধারন:
গত এক সপ্তাহ আগে পরীক্ষামূলক চলাচলের সফলতার পর আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে যুক্ত হলো আধুনিক সি-ট্রাক 'এসটি ভাষা শহীদ জব্বার'। নৌ-পরিবহন উপদেষ্টার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নৌপথে মহেশখালী দ্বীপের ৪ লাখ বাসিন্দা ও পর্যটকদের ভোগান্তি অনেকটাই নিরসন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত হওয়ায় বাড়বে দ্বীপে পর্যটকদের যাতায়াতও।
এসময় নৌপরিবহণ উপদেষ্টা ও সাথে থাকা দ্বীপের সন্তান বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ড. সলিমুল্লাহ খানকে ফুল দিয়ে বরণ করতে আসলে, অতিথিরা ফুল না দিতে বারণ করেন । পরে দুই অতিথি উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে কথা বলেন। এসময় ড. সলিমুল্লাহ খান এ নৌপথের ভাড়া সাধ্যের মধ্যে রাখা এবং দুটো সি ট্রাক চালুর দাবি জানান।
এ সময় ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ৪০-৫০ বছর এখানে মাফিয়া চক্র কাজ করেছে। এই চক্রের কারণে ৮ মাস লাগলো সিট্রাক আনতে। মামলার কারণে ড্রেজিং করা যায়নি ৬ নম্বর জেটিঘাট এলাকায়। ভবিষ্যতে আরও একটি সিট্রাক হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন উপদেষ্টা।
এসময় নৌপরিবহণ উপদেষ্টা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক প্রস্তাবিত ভাড়া ৫০ টাকা থেকে কমিয়ে পুনঃর্নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান।
নৌপথটিতে প্রতিদিন তিনবার করে যাওয়া-আসা করবে ২৫০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার সি-ট্রাকটি। সি-ট্রাক চলাচলের সময়ও এর মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা, দুপুর ১২টা এবং সন্ধ্যা ৬টায় মহেশখালীর উদ্দেশে সি-ট্রাক ছেড়ে যাবে। মহেশখালী থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছাড়বে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা, বেলা ১১টা এবং বিকেল ৫টায়। বিশেষ প্রয়োজনে রাতেও ট্রীপ নির্ধারণ আশ্বাস দেন উপদেষ্টা ।