বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ টয়লেটের ট্যাংকিতে লুকিয়ে রেখেছিলেন স্বামী

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
  ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:১৯
আপডেট  : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:২১
স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ টয়লেটের ট্যাংকিতে লুকিয়ে রেখেছিলেন স্বামী
ছবি: যায়যায়দিন

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বৃদ্ধা শাহিদা বেগম হত্যার আড়াই মাস পর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে শাহিদা বেগমের স্বামী আবদুল মমিন নিজেই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ।

পুলিশ জানায়, ঘোলপাশা ইউনিয়নের ধনুসাড়া গ্রামে গত ৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকালে শাহিদা বেগমের লাশ বাড়ির টয়লেটের রিংয়ের মধ্যে বিবস্ত্র অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তাঁর ছেলে মাছুম বিল্লাহ বাদি ও স্বামী আবদুল মমিন ১নং স্বাক্ষী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে মামলা করা হয়। মামলার পর পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সুপার মোঃ নাজির আহম্মেদ খানের নির্দেশনায় ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হেশাম উদ্দিন গত ২৭ মার্চ ১নং সাক্ষী আব্দুল মমিনকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।

তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আদালতে প্রেরণ করে মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ২ দিনের মঞ্জুর করেন। গত ২১ এপ্রিল পুলিশ আবদুল মমিনকে হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চৌদ্দগ্রাম থানায় নিয়ে আসে। আবদুল মমিনকে নিবিড়ভাবে এবং দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করার একপর্যায়ে শাহিদা বেগমকে খুন করার কথা স্বীকার করে এবং বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করে। আবদুল মমিনের বরাতে পুলিশের উল্লেখ করেন, আবদুল মমিনের মা জীবিত এবং বয়স ১৩০ এর কাছাকাছি। তাঁর মা চলাফেরা করতে পারেন না, তবে সুস্থ রয়েছেন। মায়ের সেবা যত্ম নিয়ে স্ত্রীর সাথে প্রায় ঝগড়া হতো। আবদুল মমিন ও তার ভাই পালাক্রমে এক মাস করে তাঁর মায়ের দায়িত্ব নিয়ে সেবা যত্ন করছেন। মমিনের ছেলে তাদের পুরাতন বাড়িতে মা এবং পরিবার নিয়ে থাকছে। মমিন ও তাঁর স্ত্রী শাহিদা বেগম ধনুসাড়া পূর্ব পাড়ায় তাদের নতুন বাড়িতে থাকেন। তিনি স্থানীয় মসজিদে ইমামতি করেন।

তার মা যখন তাঁর পুরাতন বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তখন মমিন সেখানে মায়ের খোঁজ খবর নিতে যান। তখন তাঁর মা নালিশ করে যে, তাঁর স্ত্রী তাঁর মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করেছে। তখন মমিন মনে মনে রাগান্বিত হয়। ওইদিন গভীর রাতে মমিন তাঁর স্ত্রী ভিকটিম শাহিদা বেগমকে মায়ের সাথে খারাপ আচরণের কথা জিজ্ঞাসা করে। এতে শাহিদা বেগম গালমন্দ শুরু করে। মমিন বিরক্ত হয়ে তাঁর পাশে থাকা বালিশ দিয়ে তার স্ত্রী শাহিদা বেগমের নাক ও মুখে চাপ দিয়ে ধরে রাখে।

কিছুক্ষণ পর দেখে, তাঁর স্ত্রী আর নড়াচড়া করছে না। এক পর্যায়ে বুঝতে পারেন, তাঁর স্ত্রী আর বেঁচে নেই। পরে ভোর রাত ৪টা থেকে সাড়ে ৪টায় স্ত্রীর লাশ কাঁধে করে বাড়ির উত্তর পাশে টয়লেটের রিংয়ের ভিতরে রেখে উপরের ঢাকনাটি আবার লাগিয়ে দেয়। লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় শাহিদা বেগমের পেটিকোটটি তার শরীর থেকে পড়ে যায়। লাশ টয়লেটে রেখে বাড়ির নলকুপ থেকে গোসল করে পেটিকোটটি বালতির মধ্যে রেখে ভোর ৫টায় আবদুল মমিন মসজিদে চলে যায়। মসজিদ থেকে এসে তার ছেলেকে ফোন দিয়ে বলে, তোমার মাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

পরে তাঁর ছেলেসহ আশেপাশের লোকজন মমিনের নতুন বাড়িতে এসে অনেক খোঁজাখুজির পর সাড়ে ৭টায় লাশ খুঁজে পায়। লাশ খোঁজার সময় আবদুল মমিন সবার সাথেই ছিল। তাকে কেউ সন্দেহ করেনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে