বানিয়াচংয়ে ধানী কৃষক সোনালী ফসল গোলায় ভরার স্বপ্ন বুনছে

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:০৬

বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচংয়ের হাওড়ে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের সমারোহ। এরই মধ্যে চারদিকে ছেয়ে আছে অবারিত সবুজ আর সোনালী ফসলের মাঠ। আর এই সবুজ মাঠে সোনালী ধানের শীষ রোদের ঝিকিমিকি আলোয় বাতাসে দুলছে হাওরের হাজারো কৃষকের স্বপ্ন।

বানিয়াচংয়ের কৃষক-কৃষাণীরা হাওড়োত্তলীত সোনালী ফসল গোলায় ভরার স্বপ্ন বুনছে। কৃষি ভান্ডার নামে খ্যাত বানিয়াচংয়ের খাদ্য ঘাটতি পূরণের অন্যতম ফসল হলো বোরো ধান। তীব্র গরম আর দীর্ঘ খরার উপেক্ষার পর অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টির পানিতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে  উপজেলার বিস্তীর্ণ হাওরের বৃষ্টি নির্ভর আবাদকৃত বোরো জমির এলাকার কৃষক-কৃষাণীর। এতে অনাবৃষ্টির ক্ষতিসাধনের চিন্তার ভাঁজ কপালে উঠলেও কিছুটা হলেও ফসল রক্ষা পাবে বলে আশাবাদী কৃষক।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার প্রতিটি বিস্তীর্ণ হাওরে বোরো ধানের সমারোহ। মাঠের পর মাঠ জুড়ে সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করছে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন। দখিনা বাতাসে ধানের শীষ দুলছে। চারদিকে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। নতুন ফসল ঘরে উঠবে এমন আশায় কৃষকের মনে দোলা দিচ্ছে এক অনাবিল আনন্দ।

অনাবৃষ্টি ও অতিরিক্ত খরার কারণে হাওড়ের বোরো জমিতে যখন চরম পানি সংকট দেখা দেয় তখন কৃষক পানিসেচ দিয়ে পূরণ করার চেষ্টা করলেও খরায় জমিগুলো ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নদী বা গভীর নলকূপের আওতাভুক্ত জমিগুলোর অবস্থা কিছুটা ভালো থাকলেও বৃষ্টি নির্ভর জমিগুলোর অবস্থা ছিল চরম বিপর্যয়ে।

কৃষক শাহজাহান মিয়ার সাথে আলাপকালে জানান, বোরো ধান চাষ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকটা নদীতে জুয়ার ভাটার মতো। কম বেশি ফলন যেমনই হোক মাঠ থেকে ধান কেটে গোলায় তোলার পূর্ব পর্যন্ত দুশ্চিন্তায় সময় কাটাতে হয় আমাদের। যে কোন সময় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেমন: অতিবৃষ্টি, শীলাবৃষ্টি, অতিরিক্ত বাতাস ও আগাম বন্যায় ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিছু জমির ধান কাটা হলেও বেশিরভাগ জমির ফসল এখনো পাকেনি। তাই আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবং বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে কাঙ্ক্ষিত ফলন হবে বলে কৃষক আশাবাদী।

কৃষক খালেদ মিয়া জানান, শ্রমিক স্বল্পতা, প্রচন্ড খরা ও  দীর্ঘদিন বৃষ্টি না থাকায় এবার ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে অন্য বছরের তুলনায় অনেকটা বেশি।

ধান কাটার পূর্বে ধান মওজুদ রাখার গোলা ও ধান মারাই করার খলা প্রস্তুতির কাজ সেরে এখন ধান কেটে গোলায় তোলার স্বপ্ন বুনছি। এখন আংশিক ধান কাটা শুরু হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই পুরোধমে ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে। এই সময়টাতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রতিকূল অবস্থার দুশ্চিন্তাও কম হচ্ছেনা আমাদের। এরপরও আল্লাহর ওপর ভরসা করে সোনালী ধান গোলায় ভরার স্বপ্ন দেখছে কৃষক।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুসারে চলতি বছরে বোরো আবাদকৃত জমির পরিমাণ ৩৩ হাজার ৭শ ৫ হেক্টর। এই বোরো মৌসুমে সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৮ হাজার ৯শ ৭১ মেঃ টন।

এব্যপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ এনামুল হক জানান, চলতি বোরো মৌসুমে অনাবৃষ্টি ও খরার প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে কৃষক কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদনে কিছুটা ব্যহত হলেও ভালো ফলনের আশাবাদী। আগাম প্রতিকূল অবস্থা থেকে ফসল রক্ষায় শতকরা ৮০ ভাগ ধান পাকলেই দ্রুত কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন। 

ধান কর্তন করতে দেশি বিদেশী শ্রমিকের পাশাপাশি উপজেলায় ৯৬টি হারভেস্টারও মাঠে রয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে সার্বক্ষণিক পাকা ধান কর্তনে কৃষকদেরকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে হাওরে শতকরা ৫৫ ভাগ, নন হাওড়ে শতকরা ১০ ভাগ বোরো ধান কর্তন করা হয়েছে। এ মৌসুমে সঠিক সময়েই আমাদের কৃষক ফসল গোলায় তুলতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 

যাযাদি/ এম