পরকিয়ার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা, ঘাতক স্বামী ও শ্বাশুড়ী গ্রেপ্তার

প্রকাশ | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:১৩

আমতলী (বরগুনা )প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

পরকিয়ার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে স্ত্রী তিন্নি আক্তারকে (২০) স্বামী মনির খাঁন (২২) পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিন্নির বাবা নিজাম হাওলাদার এমন অভিযোগ করেছেন।

 স্ত্রী তিন্নিকে স্বামী মঙ্গলবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসারা তাকে মৃত্যু ঘোষনা করে। এ সময় স্বামী মনির খান স্ত্রীর মরদেহ রেখে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে ও তার মা লাইলি বেগমকে গ্রেপ্তার করে। বুধবার সকালে তিন্নির মরদেহ পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে প্রেরণ করেছে। ওই দিন বিকেলে তার মরদেহ বাবার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার তারিকাটা গ্রামে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়।

জানাগেছে, আমতলী উপজেলার চাওড়া চন্দ্রা গ্রামের নিজাম হাওলাদারের কন্যা তিন্নিকে একই উপজেলার তারিকাটা গ্রামের হারুন খাঁনের ছেলে মনির খাঁনের সঙ্গে এ বছর এপ্রিল মাসে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর থেকে মনির খাঁন অটো রিকসা কিনবে বলে যৌতুক দাবী করে কিন্তু দরিদ্র বাবার পক্ষে যৌতুক দেয়া সম্ভব হয়নি। যৌতুক না পেয়ে স্বামী মনির খাঁন স্ত্রী তিন্নির বিরুদ্ধে পরকিয়ার মিথ্যা অপবাদ দেয়। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ করেন তিন্নির বাবা নিজাম হাওলাদার। মঙ্গবার সন্ধ্যায় স্ত্রী তিন্নিকে স্বামী মনির খাঁন পরকিয়ার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে স্বামী আহত স্ত্রী তিন্নিকে   আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মনিরুজ্জামান খাঁন তাকে মৃত্যু ঘোষনা করেন। এ সময় ঘাতক স্বামী মনির খাঁন স্ত্রীর মরদেহ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে ও তার মা লাইলি বেগমকে গ্রেপ্তার করে।  ময়না তদন্ত শেষে তার মরদেহ বাবার বাড়ীর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় আমতলী থানার হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশী কয়েকজন বলেন, স্বামী মনির খাঁন প্রায়ই স্ত্রী তিন্নিকে নানা অযুহাতে মারধর করতো। তারা আরো বলেন, শ্বশুর হারুন খাঁন ও শ্বাশুড়ী লাইলি বেগম পুত্রবধুকে মারধরে ছেলেকে সহযোগীতা করেছে।

নিহত তিন্নির বাবার নিজাম হাওলাদারের অভিযোগ করে বলেন বিয়ের পর থেকেই মেয়েকে যৌতুকসহ নানা অযুহাতে নির্যাতন করছিল জামাতা মনির খান ও তার পরিবারের লোকজন। গত ছয় মাস অটো রিকসা কিনবে বলে জামাতা মনির খাঁন আমার মেয়ের কাছে যৌতুক দাবী করে। যৌতুক এনে দিতে রাজি না হওয়ায় জামাতা আমার মেয়ের ওপর পরকিয়ার মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে। মঙ্গলবার পরকিয়ার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবী করছি।

ঘাতক স্বামী মনির খাঁন বলেন, আমার স্ত্রী তিন্নি আক্তার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমার অনুপস্থিতে মোবাইলে কথা বলতেছিল। এ নিয়ে আমার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।  এক পর্যায় ক্ষুব্দ হয়ে আমি তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করি। এতে তিন্নি চেয়ার থেকে ঘুরে পড়ে যায়। তাৎক্ষনিক আমি তাকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার তাকে মৃত্যু ঘোষনা করেন।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মনিরুজ্জামান খাঁন বলেন, হাসপাতালের আনার পুর্বেই তিন্নি মারা গেছেন। তার মাথায় আঘাতের চিহৃ রয়েছে।

আমতলী থানার ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, নিহত তিন্নির ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘাতক স্বামী মনির খান ও শ্বাশুড়ী লাইলি বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


যাযাদি/এসএস