শায়েস্তাগঞ্জে খর স্রোতা সুতাং নদী এখন সবুজের সমারোহ

প্রকাশ | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৩

শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
ছবি : যায়যায়দিন

খেয়াই, করাঙ্গী, শুটকি, সোনাই ও সুতাং নদী ছাড়ও হবিগঞ্জে রয়েছে অসংখ্য আরও খাল-ক্ষল, হাওর, বাওড়, ডোবানালা। নদীগুলোকে ঘিরে লোকসমাজে প্রচলিত রয়েছে নানান কিংবদন্তি। তেমনিই একটি শায়েস্তাগঞ্জ সুতাং নদী। সুতাং নদীর ইতিকথা জানতে গিয়েছিলাম সুতাং পাড়ের বয়োবৃদ্ধ মানুষের কাছে। তেমনি একজন মানুষ মরমি সাহিত্যিক সৈয়দ গাজীউর রহমান (৭০)। বাড়ি সুতাং নদীর পশ্চিম পাড়ের সুরাবই গ্রামে। তিনি সুতাং সম্পর্কে জানান, ভারতের ত্রিপুরা থেকে সুতাং নদীর উৎপত্তি।পাহাড়ে পার ঘেষা সুতাং নদী এককালের খর স্রোতা। নদীর জোয়ারে পার উপছে পানি বেড়িয়ে যেত। 

কালের আবর্তনে নদীর নব্যতা এখন হারিয়ে যাচ্ছে। যে নদীতে বছরের বেশীর ভাগ সময়ই পানি থাকতো। নদী পাড়ের মৎস জীবিরা মনের আনন্দে মেতে উঠতো মাছ শিকারে।“চাল­াইর বিলের কৈ-আর সুতাংয়ের পুটি” মাছের কথা এলাকার কার না জানা ছিল। কিন্তু এখন সেই নদীতে মাছতো দূরের কথা পানিই নেই। নদীর তলদেশ পর্যন্ত শুকিয়ে যাচ্ছে। সুতাং নদীর পশ্চিম পাড়ের পুরাসুন্দা গ্রামের বাসিন্দা সমুজ আলী আহমেদ জানান, বহুকাল ধরে নদী খনন হয়নি। নদীটি পাহাড়ের বুকে হওয়ায় পাহাড়ের পার ভেঙ্গে নদীতে পড়ছে। ফলে নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে সময় অসময়ে। আর এলাকার ভূমিহীন কৃষক নদীর বুকে ধানের চারা থেকে শুরু করে রীতিমত ধান রোপন করে যাচ্ছেন। 

পুরো নদী জুরে এখন সবুজের সমারোহ। যে নদীতে মাছ ধরতো এলাকার মানুষ সেই নদীতে এখন চাষাবাদ করছে তারা। সরজমিনে সুতাং নদী ঘুরে দেখা যায়, মৎসজীবিরা জালের পরিবর্তে নদীকে চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত। নদীর পশ্চিম পাড়ে ও সুরাবই গ্রামের কৃষক কিতাব আলী জানান, তার নিজের কোন জমি জমা না থাকায় নদীর চড়ে বোরো ধানের চারা লাগিয়েছেন। একই গ্রামের কৃষক জিতু মিয়া, খেলু মিয়া, আঃ মন্নাফ, রইছ উল্লা তারা বলেছেন বছরের আশ্বিন মাসে জমিতে আউশ ধান থাকায় তারা বোরো ধানের চারা লাগানোর জায়গা থাকে না। আর আশ্বিন মাসে নদীর পানি ও শুকিয়ে গিয়ে নদীর দুই বুকে চড় জাগে। 

তাই ভূমিহীন কৃষকরা নদীর বুকে জমি তৈরী করে আবাদযোগ্য করে গড়ে তোলে। কার্তিক মাসে বোর ধানের চারা লাগানো হয় এবং পৌষ মাস পর্যন্ত চারা নদীতেই থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুতাং নদীর উভয় পাড়ের ৫/৭ গ্রামের ভূমিহীন কৃষকরা নদীর পানি শুকিয়ে গেলে নদীর চড়কে ধানের চারা ও বোরো ধান লাগানোর জন্য কাজে লাগায়। শায়েস্তাগঞ্জের সুতাং নদীটি পূর্ণ খনন করে তার হাড়িয়ে যাওয়া খর স্রোতা নদী হিসেবে রূপ ফিরিয়ে আনার দাবী জানান এলাকাবাসী। 

যাযাদি/ এম