নাটোরের সিংড়া উপজেলার উত্তর দমদমা এলাকায় জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে জামাই-শ্বশুরে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে বাবা-মার সাথে জামাই আত্মগোপনে। অপরদিকে মাথা ও শরীরে জখম নিয়ে শ্বশুর হাসপাতাল বেডে দিনাতিপাত করছেন। তবে ওই ঘটনার পর মেয়ে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন। এতে জামাই-মেয়ের ডিভোর্স আশঙ্কা তৈরী হওয়ায় তাদের আড়াই বছর বয়সী একমাত্র সন্তানের জীবনে হাতছানী দিচ্ছে অন্ধকার।
সচেতন মহলের দাবী,ওই ঘটনার বলি হতে পারে ওই অবুঝ শিশু। এতে লঙ্ঘিত হতে পারে শিশুটির অধিকার।
তথ্যমতে,ওই এলাকার আফাজ উদ্দীন মেহরী ৫ ছেলে,২ মেয়ে ও স্ত্রী রেখে পরপারে পারি জমানোর আগে শখ করে বড়ছেলে গোলাম মোস্তফার বড় সন্তান তারিকুল ইসলাম তারেকের সাথে অপর ছেলে মুনসুর মোহরীর মেয়েকে বিয়ে দেন। বিয়ের সময় তারিকুলকে ১০ কাঠা জমি দিতে চাইলেও এখনও ওই জমি পায়নি তারিকুল। এদিকে পৈত্রিক জমি বন্টন নামাও হয়নি। মুনসুরের কাছে দলিলাদি থাকায় বার বার অংশ বুঝে চাইলেও মোস্তফাকে অংশ বুঝে দেয়া হয়নি। তবে কিছু জমি চাষাবাদ করে ভোগ দখলে দেয়া হয়েছে মোস্তফাকে। ওই নিয়ে দ্বন্দের জেরে কিছুদিন আগে মোস্তফাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় মুনসুররা। পরে পাশের এক জমিতে বসবাস করতে থাকে মোস্তফা-তারিকুলরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার তকাতর্কির জেরে মেস্তফা ও তার স্ত্রীকে মারপিট করে মুনসুর। বিষয়টি জানতে পেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তারিকুল তার শ্বশুর মুনসুরকে মারপিট করতে গেলে তাকেও মারপিট করে মুনসুর। বিষয়টি জানতে পেরে তারিকুলের ছোট ভাই আলীফ ছুটে গিয়ে মুনসুরকে আক্রমন করে। দুই ভাইয়ের মারপিটে মুনসুরের মাথাসহ শরীরে রতাক্ত জখম হয়। স্বজনরা মুনসুরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করালে স্বপরিবারে তারিকুলরা আত্মগোপন করে। ওই ঘটনায় তারিকুল,আলীফ ও তার দুই মামাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার নথি জমা দেয় মুনসুর। ঘটনার পর থেকে তারিকুলের স্ত্রী ও আড়াই বছরের ছেলে নুর মেহাম্মদ মুনসুরের বাড়িতে অবস্থান নেয়। ইতেমধ্যে তারিকুলকে ডিভোর্স দেয়ার চিন্তা করছে স্ত্রী এমন খবরে অবুঝ ছেলে নুর মোহাম্মদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাবা তারিকুলসহ দাদা-দাদী ও চাচা।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারিকুল জানান,বাবা-মাকে মারার খবরে ছেলে হয়ে তিনি নিজকে সংবরণ করতে না পেরে শ্বশুরকে মারতে যান। কিন্তু তাকেও যখন শ্বশুর মারতে থাকে তা দেখে ছেট ভাই তাকে বাঁচাতে তার শ্বশুরকে মারপিট করে।
তিনি অভিযোগ করেন,তার দাদা মারা যাওয়ার সময় ৩২ বিঘা জমি রেখে গেছেন। দাদার অসুস্থতার সুযোগে শ্বশুর বেশ কয়েক বিঘা জমি লিখে নিয়েছে। তার বাবা সাড়ে ৫ বিঘার মতো জমি পাওনা হলেও দেয়া হয়েছে মাত্র সোয়া বিঘা। এনিয়ে প্রশ্ন তুললে তার বাবা-মাকে মারপিট করে শ্বশুর। আবার ওই ঘটনার পর তাদেরকে আওয়ামীলীগ বানিয়ে নিজে বিএনপি সেজে তাদের বেকায়দায় ফেলতে চাইছে মুনসুর।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মুনসুর জানান,তার বাবা সাড়ে ১০ বিঘা জমি রেখে গেছেন। মেস্তফাকে তিন বিঘা জমি ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
তার দাবী,গত মঙ্গলবার ওই বিষয়ে বসার কথা থাকলেও তারিকুলরা বসেননি। বুধবার মোস্তফা ও তার স্ত্রীকে মারপিটের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবী করেন,বৃহস্পতিবার দুই মামাসহ ওই ৫ জন তাকে হাসুয়াসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্যেশ্যে হামলা করে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবী করেন,ওই ঘটনার পর তার মেয়েকেও মারপিট করে তারিকুল। বাধ্য হয়ে মেয়ে-নাতি তার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। তবে মেয়ে তারিকুলকে ডিভোর্সের চিন্তা করছেন এমন দাবী করে তিনি জানান,তিনি সিংড়া পৌর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ও ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। স্থানীয় আওয়ামীলীগের কিছু মানুষের কথায় প্রভাবিত হয়ে হত্যার উদ্যেশ্যে তার ওপর ওই হামলা করা হয়।
ওয়াড বিএনপির সভাপতি গোলাম আযম জানান,বুধবার মুনসুর তার বড়ভাই গোলাম মেস্তফা ও মোস্তফার স্ত্রীকে মারপিট করলে তারা কাঁদতে কাঁদতে তার কাছে এসেছিলেন। পারিবারিক জমি সংক্রান্ত ঝামেলা দীর্ঘদিন মুনসুর ধরে রাখার জেরে ওই ঘটনা দাবী করে তিনি বলেন,ওটা পারিবারিক দ্বন্দ্ব। বিএনপি-আওয়ামীলীগ দ্বন্দ্ব নয়।
তিনি দাবী করেন,তারিকুল,মোস্তফা,আলীফ রাও বিএনপি ভোটার ও কর্মী। ঘটনাটিকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা হচ্ছে দাবী করে তিনি,অবুঝ শিশুর কথা বিবেচনা করে বিষয়টি মিমাংসায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
যাযাদি/ এস