২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন আইভি রহমানসহ ২৪ জন। এই ঘটনায় চারটি মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে তিনটি আওয়ামী লীগ এবং একটি পুলিশ দায়ের করে। ২০১৮ সালে মামলার রায়ে ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি উচ্চ আদালতের রায়ে মামলার অসামঞ্জস্য ও আইনি ব্যত্যয়ের কারণে সব আসামি খালাস পেয়েছেন।
মামলার পটভূমি ও আইনি প্রক্রিয়া
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষ অধিকতর তদন্তের আবেদন জানায়। আদালত এই আবেদন মঞ্জুর করে এবং তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আব্দুল কাহহার আকন্দকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আকন্দ মুফতি হান্নানকে পুনরায় রিমান্ডে নিয়ে তার কাছ থেকে দ্বিতীয়বার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এই জবানবন্দির ভিত্তিতে তারেক রহমানসহ আরও ২৯ জনকে আসামি করা হয় এবং পুনরায় বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
মুফতি হান্নানের জবানবন্দি ও বিতর্ক
মুফতি হান্নান প্রথম জবানবন্দির পর ৪০০ দিন রিমান্ডে ছিলেন। দ্বিতীয়বার জবানবন্দি দেওয়ার পর তিনি আদালতে আবেদন করেন তা প্রত্যাহারের জন্য। আদালতের সামনে তিনি রিমান্ডে নির্যাতনের অভিযোগ করেন, তবে তার আবেদন গ্রহণ করা হয়নি।
উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ
হাইকোর্টে মামলাটি পুনর্মূল্যায়ন করার সময় নিম্নলিখিত তিনটি প্রশ্ন সামনে আসে:
১. একজন আসামি কি একই মামলায় দুইবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে পারেন?
২. একটি চার্জশিটের পর আবার নতুন করে তদন্ত ও চার্জশিট দাখিল করা আইনিভাবে বৈধ কিনা?
৩. দুটি চার্জশিটের মধ্যে সাক্ষ্য-প্রমাণের সামঞ্জস্য ও অপরাধের সাথে আসামিদের সম্পৃক্ততা।উচ্চ আদালত এই তিনটি বিষয়ে অসামঞ্জস্যতা এবং বেআইনি কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পেয়েছেন। আদালত বলেন, "২১ আগস্টের ঘটনা একটি ট্র্যাজিক ঘটনা হলেও অধিকতর তদন্ত এবং মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় জবানবন্দি বেআইনি ছিল।"
পরবর্তী প্রেক্ষাপট
রায়ের পর তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাহহার আকন্দ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পান এবং মামলার বিচারক শাহেদ নুরুদ্দিন হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়, পুরো মামলাটিতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ ছিল।
২১ আগস্টের এই রায় নতুন করে দেশে আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যাযাদি/এসএস