বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগ চেয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। নতুন কোষাধ্যক্ষ কর্নেল (অব.) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খানের যোগদানকে কেন্দ্র করে এ আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। এ দাবীর সমর্থন জানিয়ে শিক্ষকদের একটি অংশ শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেন। দাবী বাস্তবায়নে বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে ক্যাম্পাসে সভা করেছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার করেছেন বিক্ষোভ মিছিল।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন কোষাধ্যক্ষ কর্নেল (অব.) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খানের যোগদানকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে তাকে বিতর্কিত, দুর্নীতিগ্রস্ত ও পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর আখ্যা দিয়ে তার নিয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ। পাশাপাশি নতুন কোষাধ্যক্ষের নিয়োগ এবং তার যোগদানে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে উপাচার্য অধ্যাপক শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওই পক্ষ তার পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। নবনিযুক্ত কোষাধ্যক্ষ যোগদান করতে আসবেন, এমন সংবাদে বুধবার সকাল ১০টা থেকেই ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তখন বেশ কয়েকজন শিক্ষককে তাদের পাশে দেখা যায়। পরে ২১ জন শিক্ষকের সই করা একটি প্রতিবাদলিপিও প্রকাশিত হয়। তাতে ওই কোষাধ্যক্ষর নিয়োগ বাতিল করে যোগ্য শিক্ষকদের মধ্য থেকে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। কর্মস্থলে যোগ দিতে এসে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে প্রথম বাঁধার মুখে পড়েন নতুন কোষাধ্যক্ষ। সেসময় থেকেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়ে ওঠেন। প্রতিবাদ উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সহযোগিতায় নবনিযুক্ত কোষাধ্যক্ষের যোগদানের আগেই নিয়মবহির্ভূতভাবে রাতে এক অফিস আদেশে অফিস, কর্মকর্তা এবং গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, উপাচার্য নিজে কলিমুল্লাহর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ) হাতকে শক্ত করতে এমন কর্মকাÐ করছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ ধরনের কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার আলোচনা শেষে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে উপনীত হন তারা। পরে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল থেকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশারেফ হোসেন জানান, তাদের দাবি, বৃহস্পতিবারের মধ্যে উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে, নাহলে কঠোর আন্দোলনের পথে হাটবে শিক্ষার্থীরা।
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজন বলেন, বর্তমান উপাচার্য জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণ করেন না। সা¤প্রতিক দুর্নীতিগ্রস্ত ও বিতর্কিত নবনিযুক্ত ববি কোষাধ্যক্ষকে শিক্ষার্থীরা যোগদানে বাঁধা দিলেও উপাচার্য তাকে যোগদানের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেন। তিনি আরো বলেন, এ উপাচার্য বারবার বিতর্কিত কাজ করে শিক্ষার্থীদের আস্থা হারিয়েছেন। তিনি এক কথায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সর্বোচ্চ অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই আমরা সার্বিক দিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছি।
এদিকে প্রজ্ঞাপন জারি করা কর্মকর্তা সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) মোছা. সানজিদা সুলতানা জানান, তাকে উপাচার্য মঙ্গলবার রাতে ডেকে নিয়ে অফিস আদেশটি দিতে বাধ্য করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে আলোচনায় উপাচার্যকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। আর উপাচার্য তাদের অভিভাবক, তাই তার নির্দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
তবে ওই অফিস আদেশের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম। কিন্তু বলেন, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া এ ধরনের আয়োজন করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে উপাচার্য এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন। এদিকে একই দাবীতে বৃহস্পতিবারও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিকাল ৪ পর্যন্ত পাওয়া খবরে ভিসি পদত্যাগ করেননি। তবে এদিন সকাল থেকে তিনি অফিসও করেননি বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মিছিলের পাশাপাশি ভিসির অফিস কক্ষে তাল ঝুলিয়ে দেন।
এ বিষয় জানতে উপাচার্য শুচিতা শরমিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি কীভাবে স্বাভাবিক রাখা যায়, সেই চেষ্টা করছি। সার্বিকভাবে কাজের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
যাযাদি/ এআর