বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মালচিং পদ্ধতিতে আগাম টমেটো চাষে লাভবান কৃষক  

মো. জাহাঙ্গীর, কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম)
  ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫
মালচিং পদ্ধতির ক্ষেতে পরিচর্যা করছেন কৃষক আবদুর রহমান

বিষমুক্ত সবজি চাষে কৃষিক্ষেত্রে অন্যতম উপায় জৈব সার ও মালচিং পদ্ধতি। কম খরচে অধিক উৎপাদনে এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে লাভবান হয়েছেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার কৃষকরা। মৌসুমের শুরুতেই জুলধার মাঠ জুড়ে এখন কৃষকদের টমেটোর চাষ। কৃষকরা কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করে। তাই উৎপাদিত ফসলের চাহিদা ও মূল্য বেশি পাওয়ায় কৃষক আগ্রহী হয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন এই পদ্ধতি সম্পর্কে। আর এতে সহায়তা করছে উপজেলা কৃষি অফিস।

জানা যায়,কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ডাঙারচর সবজি চাষে উর্বরভূমি। এখানে বছরজুড়ে থাকে কোননা কোন সবজি চাষ। সবজি মৌসুমে টমেটো, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ ,আলু, বেগুনসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেছে কৃষকরা। তবে মালচিং পদ্ধতিতে আগাম টমেটো চাষে বেশ লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। জুলধা মাঠে আবদুর রহিম ২ কানি, মো শরিফ মেম্বার দেড় কানি, আবদুর রহমান ১ কানি, কামরুল হাসান ১ কানিসহ অন্তত ৫০ জন কৃষক টমেটো চাষ করেছেন। আগে জমিতে সেচ ও আগাছা দমনে সময় বেশি লাগতো। মালচিং পদ্ধতিতে তা লাগে না। আবাদ ভালো হচ্ছে এবং খরচও কমেছে। তবে কৃষকদের অভিযোগ টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করায় তারা প্রতিবছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া ইট ভাটা গুলো পানি আটকে রাখায় তাদের টমেটো চাষ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিনে পড়ে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি ও টমেটো আবাদ হয়েছে। ৫০০ মেট্রিক টন সবজি ও টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উন্নত জাতের টমেটোর মধ্যে বিউটি প্লাস, লাভলী, অভিলাস, লভেলট্রি, বাহুবলি ও জিরো ফোর জাতের টমেটো আবাদ হচ্ছে। আর এ সকল টমেটোর আবাদের খরচ কমিয়ে রোগ বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে মালচিং পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

তথ্য মতে, মালচিং মূলত চীন ও জাপানের বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। বিভিন্ন ধরনের বস্তু দিয়ে যখন গাছপালার গোডো, সবজি ক্ষেত ও বাগানের বেডের জমি বিশেষ পদ্ধতিতে ঢেকে দেওয়া হয় তখন তাকে বলে মালচ। আর এ পদ্ধতিটিকে বলা হয় মালচিং। চাষে বাণিজ্য ও আধুনিকীকরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিক মালচিং-এর ব্যবহার জনপ্রিয় হচ্ছে। যা মাটি বাহিত বালাই প্রতিরোধী করে ও সেচে সাশ্রয়ী। মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে খরচ কম হচ্ছে এবং উৎপাদিত ফসলের গুণগত মান বৃদ্ধি হচ্ছে। পাশাপাশি বাজারেও চাহিদা বাড়ছে। ফলে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে জুলধা ডাংগার চরের টমেটোসহ মালচিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত বিভিন্ন সবজি। এ পদ্ধতি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে দিতে কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

টমেটো চাষি আবদুর রহমান (৫৫) জানান, প্রচলিত পদ্ধতিতে আবাদ করে লোকসান হচ্ছিল। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে মালচিং পদ্ধতি শুরু করি। এবছর দুই কানি জমিতে টমেটো চাষ করা হয়। টমেটো গাছ অনেক বড় ও সবল হয়েছে। মাটি বাহিত রোগ বালাই নেই। সেচ খরচও হচ্ছে না। দুই কানি জমিতে টমেটো আবাদ করেত খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। আবহাওয়া ঠিক থাকলে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত টমেটো বিক্রি করা সম্ভব হবে।

তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, কৃষি জমিতে একাধিক ইট ভাটা গড়ে উঠায় তারা পানি আটকে রাখার কারনে কৃষকদের ক্ষতি হচ্ছে।

কৃষক আবদুর রহিম(৫৩) জানান, চলতি বছর এক কানি জমিতে টমেটো চাষ করেছেন, এতে তার খরচ এক লাখ টাকা, ইতিমধ্যে ১০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করেছেন, সব ঠিক থাকলে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি করা সম্ভব হবে। তিনি আরো জানান, টমোটো ছাড়াও ৪ গন্ডা জমিতে ফুলকপি,৭ গন্ডা জমিতে শিম ও বাঁধা কপি চাষ করেছেন। সেপ্টেম্বেরের শুরুতে টমেটোর চারা রোপন করা হয় আর নভেম্বরে টমেটো তোলা হচ্ছে। তবে এবছর সার, মালচিং পদ্ধতির প্লাস্টিক ও বাঁশের চিপের দাম বেশি বলে জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র সরকার বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে সবজিতে রোগবালাই কম হয় তাই কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়না। সেচ খরচও অনেক কম। উৎপাদিত ফসল দেখতেও ভালো হয়। যে কারণে বাজারেও চাহিদা বেশি। তাই কৃষকদের কাছে দিনদিন এ পদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে। এতে আমাদের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও কৃষিকদের সাহায্য করছে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে