বৈষম্য আন্দোলনের সময় দেশের চলমান পরিস্থিতির বিভিন্ন সময় অবৈধ দখলে চলে যাওয়া বনভূমি উদ্ধার এবং এ সকল জায়গায় নির্মাণ করা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিতে গাজীপুরের শ্রীপুরে অভিযান চালিয়েছে যৌথবাহিনী। শেষ পর্যায়ে অভিযান লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে অবৈধ দখলে জড়িতরা। এতে উপজেলা সহকারী কমিশনারসহ ৬জন আহত হয়েছেন। তবে, মুহুর্তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকালের দিকে বন বিভাগ ও প্রশাসনের সমন্বয়ে উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের কাফিলাতলী ও ইজ্জতপুর এলাকায় এই অভিযান চলে। সকাল থেকে শুরু হওয়া অভিযানটি সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে।
অভিযান সুত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার প্রায় ৬ একর বনভূমি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে যৌথ বাহিনী। এর মধ্যে দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযানে বাঁধা দেওয়ার কারণে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। তবে, তার নাম জানা যায়নি। আটক ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ অভিযান শেষের দিকে পৌঁছাতেই অভিযানে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে অবৈধ দখলে জড়িত ব্যক্তিরা। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ভাংচুর করা হলে তিনি আঘাত পাননি। এতে আহত হয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি আতাহার আলীসহ আরও ৬জন। একই ঘটনায় বন বিভাগের গাড়ির চালকও আহত হন।
মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, যৌথবাহিনীর এই অভিযানে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, পুলিশ ও বন বিভাগের সদস্যরা। তারা বেশ কয়েকটি এক্সকাভেটর মেশিন নিয়ে ভূমিক কর্মকর্তার কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনার সমন্বয়ে বনভূমি থেকে থাকনাগুলো উচ্ছেদ করেছেন। এ সময় বেশ কিছু স্থাপনার ভেতরে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিত্য ব্যবহৃত জিনিসপত্র গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
অভিযান চলাকালীন কাফিলাতলী গ্রামের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা তাদের ঘরবাড়ির ধ্বংসযজ্ঞ দেখে অচেতন হয়ে পড়েন। তাদের চিকিৎসা দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। অপরদিকে নিজেদের বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়ার দৃশ্য দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন সেখানকার অনেক বাসিন্দা।
জাহানারা নামের এক নারী নিজের ঘর গুঁড়িয়ে দেয়ার দৃশ্য দেখে বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘ আমাদের জোত জায়গা নাই বইলাই খাস জায়গার মধ্যে ঘর থাকি। সেখানেও থাকতে দিলেন না। বনের দালালদের টাকা দিয়েও ঘরটা টিকাইতে পারলাম না ‘।
অপর বাসিন্দা মরিয়ম আক্তার বলেন, ঘর ভাংলে আমরা আমাদের সন্তান-সন্ততি নিয়ে এ মুহূর্তে কই যামু। তাদের সাথে কথা বলতে চাইলে আইনের লোকজন আমাদেরকে ভয় দেখায়। '
ওই গ্রামের লোকজনকে গত তিন দিন ধরে মাইকিং ও সশরীরে এসে বুঝিয়েও স্থাপনা সরানো যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানে সবকিছু উদ্ধার করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বন বিভাগের সরকারি বন সংরক্ষণ ( এসি এফ) শামসুল আরেফিন। তিনি বলেন, বরের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা তৈরি করাটা অন্যায়। বন বিভাগের জমি অবৈধভাবে দখলে রাখতে দেওয়া হবে না। এই অভিযান নিয়মিত চলবে। শামসুল আরেফিন আরও জানান, আটক ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যারিস্টার সজিব আহমেদ বলেন,' সরকারি জমিতে অবৈধ উপায়ে স্থাপনা নির্মাণ করাটা আইনগত অপরাধ। পূর্বে সর্তক করেও স্থাপনা সরানো না যাওয়ায় বন বিভাগের ভূমি উদ্ধার ও অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে।'
যাযাদি/ এম