সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কলমাকান্দা কৃষকের দুর্যোগের সাথী মালশিরা ধান

কলমাকান্দা (নেত্রকোণা)প্রতিনিধি
  ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:০৪
ছবি: যায়যায়দিন

নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে পাহাড়ী ঢল, বন্যায় প্রচুর বালি এসে আদিবাসি,বাঙ্গালীদের কৃষি জমি অনুর্বর জমিতে পরিণত করেছে। এলাকার অনেক জমি ফসল চাষের বাহিরে পড়ে আছে।

ফলে প্রান্তিক কৃষক তার জমিতে ফলস ফলাতে পারছেনা। চন্দ্রডিঙ্গা, বেতগড়া, বাঘবের, সন্যাসীপাড়া, পাতলাবন, হাতিবের, উত্তর লেংগুরাসহ ২৭ টি সীমান্ত গ্রামের কৃষকরা বালি ও সেচের পানির সংকট মোকাবেলা করতে না পেরে স্থানীয়ভাবে উদ্বাস্তু হয়েছে অনেক কৃষক। শত শত উর্বর ফসলি জমি অনাবাদিতে পরিণত হয়েছে। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের সহায়তায় কৃষক নেতৃত্বে বালি ও খরা মোকাবেলায় প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে চন্দ্রডিঙ্গা, বেতগড়া, বাঘবের, সন্যাসীপাড়া, পাতলাবন, উত্তর লেংগুরা গ্রামের কৃষকেরা বালি সহনশীল শস্যফসল চাষ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ২০২০ সাল থেকে। সীমান্ত এলাকার বালিতে নষ্ট হওয়া জমিগুলোতে গত তিন বছর কৃষক নেতৃত্বে ধানজাত গবেষণা করে চলেছে কৃষক। কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের ‘চন্দ্রডিঙ্গা বাঁধরক্ষা কমিটির’ সদস্যরা পানিসহনশীল বালিতে উপযোগি সে সব ধান নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার রামেশ্সর গ্রামের তুষাই পাড়ের কৃষক সংগঠনের কাছ থেকে ২০ টি স্থানীয় ধানের জাত সংগ্রহ করে চাষ করে পরীক্ষা করছিলেন। ২০২১ সালে গবেষণা প্লট থেকে মালশিরা ,খেকশিয়া,বিশালী বিন্নি ধান বাছাই করেন। ২০২২,২০২৩ সালে কৃষক নেতৃত্বে ধানজাত গবেষণা প্লট থেকে মাঠদিসবের মাধ্যমে মালশিরা ধানপছন্দ করে নিয়ে যান ৭ জন কৃষক। ২০২৪ সালে চন্দ্রডিঙ্গা, বাঘবেড়, বেতগড়া, গোবিন্দপুর, নয়াপাড়া, খারনৈ, তারানগর, শিবপুর, মনতলা, উত্তরলেংগুরা, গৌরিপুর, বেতুয়াতলী, নলছাপ্রাসহ ১৪ গ্রামের পরিমল রেমা,গ্রেগরি ,কেরুপ কুবি,পুলক কুবি, সুনীল , আব্দুর রাজ্জাক, যন্ত্র হাজং,এলিয় , জসিন্তা রেমা,আব্দুল মান্নান, ভুট্টো মিয়া, সলিতা চিসিম,শহিদুল আলম,তারা নকরেক, প্রত্যয় জাম্বিল,আব্দুল হেলিম, নুরে আলম ২৭ জন কৃষক বালি জমিতে মালশিরা ধান চাষ করে সফল হয়েছেন। চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের কৃষক পরিমল রেমা বলেন, “আমি ৪০ শতাংশ জমিতে মালশিরা ধান চাষ করে ২৪ মণ ধান পেয়েছি। গতবছর আমার কাছ থেকে আরো ৫ জন কৃষক মালশিরা ধানের বীজ নিয়েছিল। এবছর মাঠদিবসে ১১ জন কৃষক মালশিরা ধানের বীজ পছন্দ করেছেন। ”মালশিরা” ধান এখন সীমান্ত অঞ্চলের বালি সমস্যা মোকাবেলায় কৃষকের ভরসা হয়ে উঠেছে। পছন্দের কারণ হিসেবে কৃষকেরা বলছেন, মালশিরা ধান বালি ও দোআশ মাটি উভয় জমিতেই ভালো হচ্ছে। ফলন ১০ শতকে ৬ থেকে ৭ মণ। ধানের শীষে সব ধানই পুষ্ট। ধানগাছ হেলে পড়েনা। রোগবালাই কম। বীজ রাখা যায়। ১২৪ দিনে ফলন পাওয়া যায়। আগামী বছর কলমাকান্দার বালি দুর্যোগ মোকাবেলায় মালশিরা ধান গ্রামে ছড়িয়ে পরবে বলে স্থানীয় কৃষকদের ধারণা।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে