সোনাইমুড়ী থানায় দালালদের বিরুদ্ধে সতর্কতা
প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:২৭
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানায় নানা সমস্যা নিয়ে আসছেন ভুক্তভোগীরা। নিজেরাই লিখছেন অভিযোগ, নিজেরাই কথা বলছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)'র সাথে। ঘুষ লেনদেনের ঝামেলা ছাড়াই সমাধান নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে ফিরছেন বাড়ি।
থানার আশপাশে নেই দালাল, টাউট, বাটপারদের উপস্থিতি। দেওয়ালে দেওয়ালে ওসির পক্ষ থেকে দালালদের বিরুদ্ধে সতর্কতামুলক লিফলেট সাটানো রয়েছে।সোমবার সকাল ১১ টার দিকে থানা চত্বরে গিয়ে এমন পরিবেশই চোখে পড়ে প্রতিবেদকের।
জানাযায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোনাইমুড়ী থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছেন মোহাম্মদ মোরশেদ আলম। তিনি থানা চত্বরে দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে উদ্যোগ নিয়েছেন। সোনাইমুড়ী থানার দেওয়ালে ও সামনের দোকানগুলোতে টাউট-বাটপারদের বিরুদ্ধে সতর্কীকরণ লিফলেট লাগানো রয়েছে। কম্পিটারের দোকান গুলোতে ভুক্তভোগী ও সেবাপ্রার্থীরা নিজেদের অভিযোগ লেখাচ্ছেন। আশপাশে কোন দালাল-টাউট-বাটপারের উপস্থিতি নেই। নির্বিঘ্নে তারা অনলাইনে জিডি করছেন, মামলা, অভিযোগ লেখাচ্ছেন। পরে সরাসরি নিজে থানায় প্রবেশ করে জমা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে। সেবা গ্রহণ কিংবা ওসির সাথে কথা বলতে কোন দালালের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে না। জিডি কিংবা মামলা করতে লাগছে না ঘুষ।
সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন থেকে সোনাইমুড়ী থানায় আধিপত্য ছিলো দালালদের। নিরিহ মানুষ সমস্যাগ্রস্থ অবস্থায় থানায় আসলে খপ্পড়ে পড়তে হতো টাউট-বাটপারদের। নানা ভাবে দালাল সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সর্বশান্ত হতেন সহজসরল মানুষেরা। আর এসকল কারনে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় পুলিশের। থানার সামনে দোকানগুলোতে ওৎপেতে থাকতো দালালচক্র। থানায় কোন সেবাগ্রহিতা আসলেই তারা সর্বপ্রথম জিঙ্গাসা করতো আগত ব্যক্তি কি করবেন? জিডি, অভিযোগ, না মামলা করবেন? সেবাপ্রার্থীদের প্রয়োজন শুনে সোজা চলে যেতেন থানার সামনে কম্পিউটার দোকানে। সেখানে গিয়ে মামলা বা অভিযোগ লেখার বা কম্পিউটার খরচের কথা বলে দালালচক্রটি হাতিয়ে নিতো মোটা অংকের টাকা। দালালচক্রের দ্বিতীয় ফাঁদ ছিল তারা ঐ সকল মামলা বা অভিযোগের বাদী বিবাদীর মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতো। পরবর্তীতে সালিশের আকারে থানায় বা থানার আশপাশে বৈঠকের নামে উভয়পক্ষ থেকে হাতিয়ে নিতো মোটা অংকের টাকা। এছাড়া মামলা করা, আসামী গ্রেফতার করানো, ওয়ারেন্টের আসামীর গ্রেফতার ঠেকানো, পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ নানা কাজের অজুহাতে টাকা হাতিয়ে নিতো দালাল চক্রটি। গত ৫ই আগষ্টের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক পরিচয়ধারী টাউট ও এলাকার প্রতারকচক্র থানার সামনে বসে দালালী করতো। বিষয়টি নজরে আসলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোরশেদ আলম ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।দালালদের উৎপাত বন্ধে থানার ওসির এমন পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাচ্ছে সেবা প্রার্থীরা।
টাউট-বাটপারের দৌরাত্ম্য কমায় স্বস্তি প্রকাশ করে থানায় সেবা নিতে আসা আমকি বাজার এলাকার মো:গোলাম মোস্তফা জানান, জমিজমা সংক্রান্ত একটি অভিযোগ নিয়ে তিনি এসেছেন। থানা চত্বরে কোন দালাল আজকে তাকে বিরক্ত করেনি। নিজেই কম্পিটার দোকানে বসে অভিযোগ লিখে জমা দিয়েছেন থানায়। কোন টাকা-পয়সার লেনদেন করতে হয়নি।
আরেক সেবা প্রত্যাশী রিমা আক্তার এসেছেন বজরা ইউনিয়ন থেকে। পারিবারিক কিছু সমস্যার বিষয়ে তিনি প্রতিকারের আশায় থানায় এসেছেন। তিনি জানান, থানা চত্বরে কোন দালাল না থাকায় কোন টাউট-বাটপারের ক্ষপ্পরে তাকে পড়তে হয়নি। অভিযোগ কম্পিটারে লেখা শেষে নিজেই জমা দিবেন।
দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সোনাইমুড়ী থানার ওসি মোহাম্মদ মোরশেদ আলম জানান, থানায় দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। দালাল-টাউটেরা থানার পরিবেশ নষ্ট করে। পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এজন্য থানা চত্বরে টাউট-বাটপার-দালাদের প্রবেশ নিষেধ। এখন থেকে মামলা, জিডিসহ পাবলিক সেবায় কোন ঘুষের লেনদেন চলবে না।
যাযাদি/এসএস