বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনাস্থলে ৩ তদন্ত দলের পরিদর্শন
প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:২৬
গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুতায়িত হয়ে আইইউটির তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির তিনটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরের দিকে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী ও উত্তরপেলাইদ গ্রামের মাটির মায়া রিসোর্ট ও রাস্তা পরিদর্শন করেছেন তারা।
দলগুলো হলো, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, আইইউটি ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। তদন্ত দলের মন্তব্যে উঠে আসে আইইউটির তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর দায় কারো একার নয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্তারিত উঠে আসবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
জানা যায়, পিকনিকের বাসে বিদ্যুতায়িত হয়ে আইইউটির তিন শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় ওই দিন পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। গাজীপুরের জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলাম্যাজিষ্ট্রেট ছালমা আক্তারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন, আইইউটির প্রো-ভিসি রাকিবুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, এবং পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প) আবদুর রহিম মল্লিককে প্রধান করে আট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
সোমবার দুপুরে আইইউটি এবং পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের দু’টি তদন্ত দল ঘটনাস্থলে আসেন। একই দিন স্বপ্রনোদিত ভাবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথক তদন্ত দল ঘটনাস্থলে আসেন। তদন্ত কালে কমিটি ঘটনাস্থল, সড়ক, বিদ্যুতের লাইন, রিসোর্টের অবস্থানে যাতায়ত, শিক্ষার্থীদের পরিবহনের বাস, সংশ্লিষ্টদের দায়দায়ীত্বের বিষয় খতিয়ে দেখেন।
তদন্ত কমিটি সুত্র ও সরেজমিনে জানা যায়, জৈনাবাজার থেকে উত্তরপেলাইদ মাটির মায়া ইকো রিসোর্ট পর্যন্ত সংকীর্ণ আঁকাবাঁকা গ্রামীন সংযোগ সড়কটি বড় যান বাহন চলাচলের অনুপোযোগী। সড়ক জুরে ঝুলে আছে গাছের ঢাল পালা। ঘটনাস্থলে পল্লীবিদ্যুতের এইচটি লাইনের বিদ্যুতের দু’টি খুঁটির দূরত্ব ৩০০ফুট। ওই দু’টি খুঁটির তার ঝুলে আছে। ঘটনাস্থলে ১১হাজার ভোল্টের এইচটি লাইনের তারের উচ্চতা ১৪ফুট ৯ইঞ্চি থেকে১৪ফুট ৬ইঞ্চি। এইচটি একটি তারের উচ্চতা ১৫ফুট ৫ইঞ্চি। টু ফেস ২২০ ভোল্টের তারের উচ্চতা ১ থেকে ১২ফুট। নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুতের তার মাটি থেকে সাড়ে ষোল ফুট উচ্চতায় থাকার কথা। প্রায় প্রতিটি তারই ঝুলে বিপদ সীমার মধ্যে রয়েছে। সাড়ে পনেরো ফুট উচ্চতার ডাবল ডেকার বাস এ সড়কে প্রবেশ করা পুরোই ঝুকিঁ পূর্ণ।
স্থানীয়রা জানান, এর আগে ওই সড়কে কখনো ডাবল ডেকার বাস আসেনি। বাস গুলোতে কোন চালকের সহকারী ছিলোনা। এমন গ্রামীন সড়কে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে ডাবল ডেকার বাস প্রবেশ করায় এ মর্মান্তি ঘটনা ঘটেছে।
পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান খান গনমাধ্যকে বলেন, আমরা স্বপ্রনোদিত হয়ে ঘটনাস্থল তদন্তে এসেছি। এ ঘটনার জন্য পার্ক কর্তৃপক্ষ, আয়োজক প্রতিষ্ঠান,পল্লীবিদ্যুৎ সকলের দায় রয়েছে। '
আইইউটির প্রো-ভিসি অধ্যাপক রাকিবুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন,' শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় আমরা শোকাহত। ঘটনাস্থলে এসে বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করছি। বিষয়টি তদন্ত চলছে । শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে।'
পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের তদন্ত দলের প্রধান প্রকৌশলী প্রকল্প আবদুর রহিম মল্লিক জানান, ঘটনাস্থলের বিদ্যুতের লাইন পরীক্ষা নিরীক্ষার করা হয়েছে। আমরা ক্ষতিয়ে দেখছি। ইতোমধ্যেই কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৭জনকে সাময়ীক বরখাস্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কারো দায়ীত্বে অবহেলা প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা হবে।'
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (২৩নভেম্বর) সকাল সাড়ে দশটার দিকে গাজীপুরস্থ আইইউটির ৫০০ জন শিক্ষার্থী ছয়টি ডাবল ডেকার বাস ও তিনটি মাইক্রো বাস নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার উত্তরপেলাইদ গ্রামের মাটির মায়া ইকুরিসোর্টে আসেন। পথিমধ্যে উদয়খালী মোড়ে পেছনের একটি বাস ১১০০ ভোল্টোর বিদ্যুতের তার স্পর্শ করে। এতে তিন শিক্ষার্থী বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
যাযাদি/এসএস