ধর্ষণের নাটক সাজিয়ে যুবককে ফাঁসানোর চেষ্টা, কারাগারে নারী

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫০

মিঠাপুকুর প্রতিনিধি
ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের মিঠাপুকুরে পতিতা নারীকে ব্যবহার করে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দিয়ে যুবককে নিজ বাড়িতে ডেকে কৌশলে অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে চাঁদা দাবির অভিযোগে এক নারীকে কারাগারে প্রেরণ করেছে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ। এমনকি চাঁদা না পেয়ে ওই দুই নারী নিজেদের গণধর্ষনের শিকার দাবি করে নাটক সাজান বলে জানান পুলিশ। 

রবিবার (২৪ নভেম্বর) এ ঘটনায় মিঠাপুকুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় এবং এরপূর্বে (২১ নভেম্বর) রাত আনুমানিক ১২ ঘটিকার সময়  ১৫ নং বড় হযরত পুর ইউনিয়নের পশ্চিম চিথলী পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গিয়েছে। 

মামলার বিবরণ ও পুলিশ জানায়, মিঠাপুকুর উপজেলার ১৫ নং হযরতপুর ইউনিয়নের চিথলী পশ্চিম পাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের পুত্র কুখ্যাত গরু চোর মিজানুর রহমান মিজান (৩৫) বিভিন্ন সময়ে তার নিজ বাড়িতে দেহব্যবসায়ী নারীদের এনে এলাকার যুবকদের দিয়ে কমিশনে অনৈতিক কাজ করাতেন। ঘটনার দিন ২১ নভেম্বর রাতে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার হাবুল্ল লক্ষ্মীপুর থেকে ওই নারী সহ দুই নারীকে মিজান তার নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন।

মিজান তার বাড়িতে ওই নারীকে রেখে অনৈতিক কাজের জন্য মিঠাপুকুর উপজেলার খোর্দ্দ শেরপুর গ্রামের আব্দুল হান্নান মিয়ার পুত্র জুয়েল মিয়া (২৫) নামে ওই যুবককে ফোন দেন। জুয়েল ওই নারীর সাথে অর্থের বিনিময়ে অনৈতিক কাজের জন্য মিজানের বাড়িতে গেলে মিজানের সহযোগী সাহেবা খাতুন ,মিঠু মিয়া কৌশলে ওই নারীর সঙ্গে করা বিশেষ কিছু অন্তরঙ্গ ভিডিও এবং ছবি ফোনে ধারণ করেন। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে একটি ভিভো ফোন, নগদ ৫০০০ টাকা ছিনিয়ে নেন। এসময় ওই নারী সহ মিজান, আরো একলক্ষ টাকা জুয়েলকে নিয়ে আসার জন্য চাপ দেন।

ওই নারী এবং মিজানের চাপে,জুয়েল তার বন্ধু মিনুকে ফোনে টাকা নিয়ে ডাক দিলে জুয়েলের বন্ধু মিনু ঘটনাস্থলে আসলে তাকেও ব্ল্যাকমেইল করা হয়। এসময় ওই নারী সহ মিজান তাদের কাছে টাকা না পেয়ে জুয়েলের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল আটক করে রাখেন। জুয়েল ও মিনু মোটরসাইকেল উদ্ধার করার পূর্বেই মিজান ওই নারীকে কৌশলে থানায় ধর্ষণ মামলা দেওয়ার জন্য পাঠিয়ে দেন এবং পুলিশ গণধর্ষনের অভিযোগ পেয়ে রাতেই জুয়েল ও মিনুকে থানায় নিয়ে আসেন।

জুয়েল ও মিনুকে আটকের পর বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ওই দুই নারী স্বীকার করে তারা দেহ ব্যবসা করে এবং তাদের চুক্তিকৃত টাকা না দেওয়ায় মিজানের পরামর্শে তারা ধর্ষণ মামলার নাটক সাজায়। এসময় পরিস্থিতি ভিন্ন বুঝতে পেরে ওই নারীর সহযোগি সাহেবা খাতুন থানা থেকে সটকে পড়েন। 

দীর্ঘ তদন্ত, স্থানীয়দের বক্তব্য, কল রেকর্ড যাচাই-বাছাই শেষে পুলিশ নিশ্চিত হয় এটা ধর্ষণের ঘটনা নয় বরং এই নারী চক্র উঠতি যুবক আর তরুণদের তাদের জালে ফাঁসিয়ে চাঁদা দাবি করে চাঁদা না পেলে ব্লাকমেইল করেন। পরে ভুক্তভোগী যুবক মিঠাপুকুর থানায় ৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ ওই নারীকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক, যায়যায়দিনকে জানান, এই চক্রটি দেহব্যবসার আড়ালে যুবক আর তরুণদের জিম্মি করে চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা না পেলে ধর্ষণ মামলা সহ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। এ ঘটনায় বাকী অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে বলেও তিনি জানান।

যাযাদি/এআর