ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানা সিবিএ নির্বাচন স্থগিত

প্রকাশ | ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৪২

সিলেট অফিস
ছবি: যায়যায়দিন

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানা সিবিএ নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর এই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আখলাক হোসেন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। একই সাথে পরবর্তী করনীয় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে বলে উল্লেখ করা হয়।


অনুসন্ধানে জানা গেছে,  ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানা  সিবিএ  নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির প্রভাবশালী দুই নেতা সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ খান জামাল এর অনুসারীরা এখন  মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন।


নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ থেকেই আটঘাট বেঁধে মাঠে নামেন কাইয়ুম চৌধুরী অনুসারীরা। এই পক্ষের নেতা সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন তার ছোট ভাই  চাঁদপুরের বাসিন্দা সারকারখানায় কর্মরত হুসেন আহমদ পাটোয়ারী শিপনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়  সাধারণ সম্পাদক বানাতে মরিয়া হয়ে উঠেন। নিজে প্রভাব খাটানোর পাশাপাশি সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওহিদুজ্জামান চৌধুরী সুফিকে সাথে নিয়ে সারকারখানায় স্ব শরীরে গিয়ে এবং সিলেটে ডেকে এনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের আঞ্চলিক এলাকার নেতৃবৃন্দকে ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখান বলে অভিযোগ রয়েছে।  নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে এবং শিপনকে সমর্থন না দিলে মামলা হামলার হুমকি দেন। নির্বাচনে তাদের প্রতিপক্ষ সভাপতি পদপ্রার্থী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি নাইমুল করিম খসরু সহ নেতৃবৃন্দকে সিলেট নগরীর ষ্টার প্যাসিফিক হোটেলে ডেকে এনে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে হুমকি ধামকি ও মামলার ভয় দেখানোর কথা জানাজানি হলে সারকারখানা ও ফেঞ্চুগঞ্জে ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। জানা যায় এর পর থেকেই সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল ও তার অনুসারীরা নাইমুল করিম খসরু ও তার অনুসারী শ্রমিক নেতৃবৃন্দের পক্ষে অবস্থান নেন।

নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই ১৩ নভেম্বর কোতোয়ালি থানায় একটি রহস্যময় মামলা দায়ের করে গোলাপগঞ্জের জনৈক মাসুম আহমদ। এই মামলায় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সাথে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার  বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতা ও সারকারখানার বেশ কয়েকজন শ্রমিক নেতাকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলা দায়েরের পরদিন রাতে ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানা থেকে গ্রেফতার করা হয় নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হারুনর রশীদ হারুন ও আরিফ আহমদ নামের দুই শ্রমিক নেতাকে। এর মধ্যে হারুন সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন এর ভাই হুসেন আহমদ পাটোয়ারী শিপন এর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। রহস্যময় মামলায় দুই শ্রমিক নেতা গ্রেফতার হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দানে বেঁধে উঠে।


এরই মধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হলে কাইয়ুম অনুসারীরা প্রতিপক্ষকে অব্যাহত চাপ দিতে থাকে।

 এরই মধ্যে কাইয়ুম চৌধুরী অনুসারীরা শ্যামল ও শিপনকে দিয়ে একটি প্যানেল জমা দেন। একই ভাবে খান জামাল অনুসারীদের সমর্থন নিয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা নাইমুল করিম খসরু একটি  প্যানেল জমা দেন। রহস্যময় মামলায় কারাগারে বন্দি হারুনর রশীদ হারুন ও আরিফ আহমদ আদালতের অনুমতি নিয়ে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মনোনয়ন জমা দেন। দুই পক্ষ মনোনয়ন জমা দেওয়ায় সারকারখানায় নির্বাচনী আমেজ দেখা দেয় এবং শংকা কিছুটা কমে আসে।


এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো: আখলাক হোসেন চৌধুরী নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করায় এ নিয়ে  তোলপাড় শুরু হয়েছে। একাধিক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন নিশ্চিত ভরাডুবি আঁচ করতে পেরে শ্যামল- শিপন প্রভাব খাটিয়ে কাইয়ুম চৌধুরীকে দিয়ে নির্বাচন স্থগিত করিয়েছে। এটা শ্রমিকদের পিঠে ছুরিকাঘাত এর শামিল।


সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো: আখলাক হোসেন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে  তিনি নির্বাচন স্থগিতের বিষয় স্বীকার করেন। তিনি  জানান, কারাগারে থাকা দুইজন প্রার্থী সম্পর্কে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবো। নির্বাচন স্থগিতে কোনো চাপ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তেমন কোনো  চাপ নেই।

যাযাদি/এসএস