গো-খাদ্যের সংকটে পশু বিক্রি করছেন কৃষকরা
প্রকাশ | ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:৪৫
নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর উপজেলার শিবগঞ্জ সাপ্তাহিক হাটে বেড়েছে পশুর কেনাবেচা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষক ও খামারেরা তাদের পশু নিয়ে আসেন এই হাটে। প্রতি হাটে বেচাকেনা হয় প্রায় অর্ধকোটি টাকার উপরে। তবে কৃষকরা বলছেন আকস্মিক বন্যায় ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি পঁচে গেছে গবাদি পশুর খাদ্য খড়। গো খাদ্য অভাব আর খরচ মেটাতে না পারায় অনেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন গবাদি পশু। তবে হাটের হাসিল মওকুফ করায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে।
সীমান্তবর্তী এই উপজেলায় কৃষকদের আয়ের অন্যতম পথ ফসল ও পশু লালন পালন। এ থেকেই আয় হয় তাদের বাড়তি কিছু টাকা। তবে অক্টোবরের আকস্মিক বন্যায় ফসল পঁচে নষ্ট হওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে গো খাদ্যেও। সংকট নিরসনে এখন অনেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন তাদের পালিত পশু।
কৃষক মোহাম্মদ আবুল কালাম। লালন পালনের জন্য গত চার মাস আগে একটি ফ্রিজিয়াম জাতের দুধের গাভি কিনলেও বন্যার পর খাদ্যের দাম বৃদ্ধি আর লালন-পালনের খরচ বাড়ায় গাভীটিকে বিক্রি করতে হাটে তুলেছেন তিনি। দরদাম শেষে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে তার শখের গাভীটি।
আবুল কালামের মত প্রায়ই সকল কৃষকেরই যেন একই অবস্থা। আকস্মিক বন্যার পর গো খাদ্যের সংকটে অনেক কৃষকই এখন দিশেহারা। তাই অতিরিক্ত খরচের বোঝা বইতে না পেরে অনেকেই পশু বিক্রি শুরু করেছেন। ফলে হাট গুলোতে তুলনামূলক বেচাকেনা বাড়লেও সে তুলনায় কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না কৃষক ও খামারিরা।
তবে হাটগুলোতে ভিড় রয়েছে ক্রেতা বিক্রেতার। সীমান্তবর্তী দুর্গাপুরের শিবগঞ্জ সাপ্তাহিক হাটে আশপাশের উপজেলা থেকেও পশু নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। এখানকার গরু পাইকারের হাত ধরে রাজধানী শহর ঢাকাসহ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে হাট গুলোতে ছোট থেকে মাঝারি প্রায় সব প্রকার গরুর চাহিদা বেড়েছে বাজারগুলোতে। বিশেষ করে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে পশুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
তবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কথা মাথায় রেখে হাটের ইজারা কর মওকুফ করায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে হাটের বেচাকেনায়। যার ফলে আগের তুলনায় বেড়েছে বেচাকেনা।
বিক্রেতারা ও হাট পরিচালনাকারীরা বলছেন,তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের লোকজন সিন্ডিকেট করে হাট থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতেন। ছোট গরু এক হাজার টাকার উপরে দিতে হয়েছে তাদের। তবে এখন সেই টাকায় পরিবহনে খরচ মেটাতে পারছেন তারা। আর আগস্টের পর ইজারাদার পালিয়ে যাওয়ায় বাজার সুশৃংখল ও কৃষকদের কথা চিন্তা করে বিএনপির উদ্যোগে হাটের ইজারা কর মওকুফ করা হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরে শিবগঞ্জ পশুর হাট স্থানীয় পৌর থেকে প্রায় এক কোটি টাকার উপরে ইজারা পায় স্থানীয় ইজারাদার আবুল কাশেম। বেচাকেনা ভালো হলে এ হাতে আয় হয় প্রায় অর্ধ কোটি টাকার উপরে আর উৎসবগুলোতে বেচাকেনা দাঁড়ায় কোটি টাকার বেশি।
শিবগঞ্জ হাট পশুর হাট পরিচালনাকারী খাঁন সুমন বলেন,গত অক্টোবরে আকস্মিক বন্যায় এ অঞ্চলের কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই কৃষকদের কথা মাথায় রেখে আমাদের নেতা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ভাইয়ের নির্দেশে হাটের ইজারা কর মওকুফ করা হয়েছে। মূলত আমরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাজারটি পরিচালনা করছি। কেন কৃষক ও খামারিরা কোন প্রকার ভোগান্তি বা হয়রানীর মুখোমুখি না হয়।
তিনি আরো জানান,আমরা হাটের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে প্রতি শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করছি। এছাড়াও ক্রয় বিক্রয়ের রশিদও প্রদান করছি যেন খামারি কিংবা কৃষকরা যেন তাদের পরশু ক্রয় বিক্রয় করে প্রমাণপত্র নিতে পারেন। পরবর্তীতে অন্য কোথাও তাদের হয়রানির শিকার হতে না হয় তাও আমরা লক্ষ্য রাখছি। এ কার্যক্রম এখন চলমান থাকবে। পরবর্তীতে আমরা কৃষকসহ সবার সাথে বসে নামমাত্র একটি হাসিল নির্ধারণ করবো।
যাযাদি/এআর