রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

খাসিয়াদের বর্ষবিদায় ‘খাসি সেং কুটস্নেম’

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
  ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪
আপডেট  : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১২
ছবি: যায়যায়দিন

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের মধ্যবর্তী খাসিয়া পুঞ্জি মাগুরছড়ায় নেচে-গেয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপন হল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী খাসিয়া সম্প্রদায়ের বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’। পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতেই ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।

শনিবার (২৩ নভেম্বের) সকাল থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মাগুরছড়া পুঞ্জির ফুটবল মাঠে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের আয়োজনে দিনব্যাপী এ উৎসবটি অনুষ্টিত হয়।

খাসিয়া সস্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবে সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

আয়োজকরা জানান, ‘সেং কুটস্নেম’ বা বর্ষ বিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন প্রাচীনতম উৎসব। উৎসবকে কেন্দ্র করে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। এর মধ্যে দিনব্যাপী তাদের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে পাহাড়ি নৃত্য ও গান পরিবেশনের পাশাপাশি জীবন-জীবিকার বিভিন্ন পদ্ধতি নৃত্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।

পাশাপাশি মাছ শিকার, খেলাধুলা, ঐতিহ্যগত পোষাক পরিধান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে তারা আনন্দ ফুর্তি করেন। উৎসবকে উপলক্ষ করে মাগুরছড়া পুঞ্জি মাঠে বসে মেলা। সেখানে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন তারা। খাসিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষসহ দেশী-বিদেশী পর্যটকরা অংশগ্রহণ করেন। মূলত খাসিয়া তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি পরিচয় করিয়ে দিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তারা।

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও মাগুরছড়া পুঞ্জি’র মান্ত্রী জিডিশন প্রধান সুছিয়াং সাংবাদিকদের বলেন, প্রতি বছর ২৩ নভেম্বর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কয়েক মাস যাবৎ খাসিয়া পানের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় অর্থনৈতিক চাপে এবারের ১২৫তম উৎসব বর্ষ বিদায় ও ১২৬তম নতুন বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হওয়ায় সরকারের সুদৃষ্টি আসে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে জেলা প্রশাসক ও শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা সুন্দরভাবে এবারের উৎসবটি করতে পেরেছি।

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি জিডিসন প্রধান সুচিয়াংয়ের সভাপতিত্বে বর্ষবিদায় উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুস সালাম চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডি.এম সাদিক আল শাফিনসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যানরা।

মূলত ১৮৯৯ সাল থেকে খাসি জনগোষ্ঠীর লোকজন এ অনুষ্ঠান করলেও বাংলাদেশে ২০১১ সাল থেকে আয়োজন করা হয় এ অনুষ্ঠানের। বৃট্রিশ আগ্রাসনে যখন আদিবাসীদের ভাষা সংস্কৃতি হুমকির মধ্যে পড়েছিল, তখন কিছু খাসি তরুণ মিলে এই উদ্যোগ নিয়ে “সেং খাসি” নামে একটি সংগঠন করেছিলেন। সেই দিনটি ছিল ২৩ নভেম্বর। সেই থেকে দিনটি পালন করে আসছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী খাসিয় সম্প্রদায়।’

যাযাদি/এআর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে