শহিদ সূর্যই ছিলো মায়ের বাঁচার অবলম্বন
প্রকাশ | ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২০:৫৭
৫ আগস্ট দিনাজপুরের হিলিতে শহিদ হয়েছিলো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী আসাদুজ্জামান নুর সূর্য (১৫)। সে পৌর এলাকার জালালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সূর্যই ছিলো মা সুলতানা রাজিয়ার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ছেলেকে হারিয়ে মা আজ পাগল প্রায়, কিছুতেই থামছে না এই মায়ের কান্না। ছেলে হত্যার বিচারের দাবি এই অসহায় মায়ের চোখেমুখে।
হিলির ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের এক দুঃখিনী মা সুলতানা রাজিয়ার ছেলে শহিদ সূর্য। মা সুলতানা রাজিয়া একটি জুটমিলের শ্রমিক। সূর্য যখন খুবি ছোট, তখন তার বাবা তাদের ছেড়ে চলে গেছে। জুটমিলে কাজ করে সংসার চালায় মা। তার আশা ছেলেকে কষ্ট করে হলেও লিখাপড়া শিখে মানুষের মতে মানুষ করবেন। সূর্য নবম শ্রেণির ছাত্র। একদিন ছেলে বড় হয়ে মায়ের সব স্বপ্ন পুরন করবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন মায়ের স্বপ্নই রয়ে গেলো।
৪ আগস্ট সকালে সূর্য মায়ের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে। সারাদিন চলে গেলেও বাড়ি ফিরে আসে না সূর্য। ছেলে বাড়িতে না আসায় অনেকের কাছে ছুটে বেড়ায় মা। রাত হয়ে গেলেও খোঁজ পাচ্ছে না ছেলের। পরদিন ৫ আগস্ট মা হিলি শহরের বিভিন্ন স্থানে খুঁজে ফিরেন। কোথাও কোন সন্ধান মেলেনি ছেলের। পরে রাত ১০ টার সময় খবর আসে পৌর মেয়রের বাড়ি থেকে সূর্যের পোড়া লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। মেয়রের বাড়ির আগুনে পুড়ে গেলো মা সুলতানা রাজিয়ার স্বপ্ন, আশা আর বেঁচে থাকার শেষ সম্বলটুকু। চোখের পানিই যেন নিত্যদিনের সঙ্গী হলো এই মায়ের।
গ্রামবাসীরা বলেন, সূর্য একটা ভাল ছেলে ছিলো। অনেক কষ্ট করে তার মা তাকে লিখাপড়া করাচ্ছিলো। জুটমিলে কাজ করে ছেলেকে মানুষ করছে। সূর্য কখনও কারও সাথে খারাপ আচারণ করেনি। ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলো। এখন সূর্যের মা ছেলের শোকে পাগল হয়ে গেছে। সারাদিন ছেলের ছবি আর কাপড় বুকে নিয়ে কেঁদে বেড়ায়।
শহিদ সূর্যের মা সুলতানা রাজিয়া কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার সূর্য নাকি মারা যায়নি, সে নাকি সবার মাঝে বেঁচে আছে। কিন্তু কই কারও মাঝে তো আমার বুকের ধনকে খুঁজে পাইনা। সেই যে ৪ আগস্ট সকালে ছেলে আমাকে বললো মা আমি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যাচ্ছি। আমি বলেছিলাম বাবা সাবধানে থেকো। সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরে এসো। সেদিন আর ফিরে এলোনা, ফিরে এলো পরের দিন রাতে, কিন্তু পোড়া লাশ হয়। ছেলের সাথে সাথে পুড়ে গেলো আমার সব স্বপ্ন আর বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। সেই যে ৪ আগস্ট সকালে শেষ সূর্য উঠেছিলো, এখন তো আর আমার আকাশে সূর্য উঠে না।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী রুপকথা বলেন, আমরা দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহতদের সঠিক বিচার পাচ্ছি না। গত ৪ আগস্ট হিলি রেলস্টেশনে আমাদের আন্দোলন ছিলো। সূর্য আর আমরা হিলি চারমাথা হয়ে স্টেশনের দিকে আসার সময় আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী সূর্যকে আটক করে এবং আমাদের রামদা দিয়ে তাড়া করে। আমরা পালিয়ে যায়। পরে আমাদের সাথী সূর্যকে আর খুঁজে পাইনি। পরের দিন ৫ আগস্ট রাত ১০ টায় সাবেক মেয়র জামিল হোসেন চলন্তের বাড়ি থেকে সূর্যের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। আমরা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীর নিহতদের সঠিক বিচার চাই।
হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী বলেন, ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী সূর্য শহিদ হয়েছে। আমরা শহিদ সূর্যের রক্ত বিথা যেতে দিবো না। তার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় ২৩ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন আসামি গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যান্য আসামিরা পালিয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সূর্য হত্যার বিচার করবে। এছাড়াও বিএনপি সহ অনেকেই শহিদ সূর্যের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে।
সাবেক পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্তের বাড়িতে আসাদুজ্জামান নুর সূর্যের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এবিষয়ে মেয়রের বক্তব্য জরুরি। তবে ৫ আগস্ট থেকে তাকে খোঁজে পাওয়া যায়নি। বিধায় জামিল হোসেন চলন্তের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সুজন মিঞা বলেন, ৫ আগস্ট হিলিতে সূর্য সহ দুইজন শহিদ হয়েছে। এবিষয়ে ২৩ জনের নামে মামলা হয়েছে। অনেক আসামি আটক হয়েছে, বাঁকি আসামিদের আটকের চেষ্টা চলছে।
যাযাদি/এসএস