শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

লড়াকু বাবা তোফাজ্জল হোসেন ও মেয়ে শাহনাজ আক্তার এর স্বপ্নজয়ের গল্প

বরুড়া প্রতিনিধি
  ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৫৫
ছবি: যায়যায়দিন

কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ এলাকার একটি রেস্তোরাঁর কর্মী তোফাজ্জল হোসেন। অর্থের অভাবে লেখাপড়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি তাঁর। ১৩ বছর বয়সে কাজ শুরু করেন রেস্তোরাঁয়।

নিজে লেখাপড়া করতে না পারার কষ্ট দূর করতে স্বল্প আয়ের মধ্যেও ছেলেমেয়েদের শিক্ষাবঞ্চিত করেননি। চার সন্তানের মধ্যে মেজ সন্তান শাহনাজ আক্তার ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। যোগ দেবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সহকারী মহাহিসাবরক্ষক পদে।

এর আগে ৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে শাহনাজ একটি সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন। তবে রেস্তোরাঁর সহকর্মী থেকে শুরু করে পরিচিতরা তোফাজ্জল হোসেনকে ডাবল বিসিএসের বাবা হিসেবে ডাকেন। সন্তানের সাফল্যে আনন্দে আত্মহারা এই বাবা। তিন সন্তানের মধ্যে শাহনাজ মেজ। বড় ছেলে প্রবাসে থাকেন। অপর দুই ছেলেও লেখাপড়া করছেন। তোফাজ্জল হোসেনের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার পিলগিরি গ্রামে।

তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি লেখাপড়া করতে পারিনি। নামও লিখতে পারি না। তাই সন্তানদের লেখাপড়া করানোর খুব ইচ্ছা ছিল। রেস্তোরাঁয় ছোট চাকরি করে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাই। আমার স্ত্রী আয়েশা বেগমও সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। রেস্তোরাঁর মালিক অনেক সহযোগিতা করেছেন। ৪৫ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। ছেলেমেয়েরা এখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাঁরা আমাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলে। কিন্তু আমি রেস্তোরাঁর মালিক, সহকর্মীসহ কাস্টমারদের মায়ায় পড়ে গেছি। যত দিন শরীর ভালো থাকে, আমি এ কাজ করে যেতে চাই।’

শাহনাজ আক্তার বলেন, ‘সংসার, সন্তান সামলে গণিত বিষয় নিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে অনার্সসহ মাস্টার্স করেছি। এইচএসসির আগে বিসিএস সম্পর্কে ধারণা ছিল না। প্রাইমারি শিক্ষকের নিয়োগ পরীক্ষার কোচিং করতে গিয়ে জানতে পারি, সেটি বিসিএস কোচিং সেন্টার। তারপর মাথায় বিসিএসের লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে যেতে শুরু করি।’

শাহনাজ আক্তার আরও বলেন, ‘বাবা রেস্তোরাঁর সামান্য একজন কর্মী। স্বল্প বেতনে চাকরি করেন। মা-বাবা আমাদের লেখাপড়া করাতে অনেক কষ্ট করছেন। আমি বাবার পেশাকে সম্মান করি। আমার কাছে বাবাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা।

মা-বাবার প্রবল ইচ্ছা, শ্রম, ত্যাগ এবং আমার আত্মবিশ্বাস এত দূর এগিয়ে এনেছে। মা-বাবার প্রত্যাশা পূরণের পাশাপাশি দেশের জন্য কাজ করতে চাই।’

রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে আসা ব্যবসায়ী নুরুল্লাহ বলেন, ‘এখানে আসা-যাওয়ার সুবাদে তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে পরিচয়। তিনি বেশ পরিচিত আমাদের। খুব বিনয়ী একজন লোক। একজন হোটেল কর্মীর হয়েও তাঁর সব ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন। এক মেয়ে ডাবল বিসিএস পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হন। আসলে ইচ্ছা শক্তি থাকলে অনেক কিছুই সম্ভব; যার উদাহরণ তোফাজ্জল হোসেন ও তাঁর মেয়ে শাহনাজ আক্তার।

তোফাজ্জল হোসেনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার আড্ডা ইউনিয়নের পিলগিরি গ্রামে অবস্থিত।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে