বিজয়নগরে চমক সৃষ্টি করলেন দুই প্রবাসী 

প্রকাশ | ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:১২

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ছবি : যায়যায়দিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে চায়না থ্রি জাতের কমলার চাষ করে কৃষিতে নতুন চমক সৃষ্টি করেছেন প্রবাস ফেরত দুই যুবক আলমগীর ভ‚ইয়া ও খোকন মিয়া। বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দুলালপুর গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর ভূইয়া ও একই ইউনিয়নের ছতুরপুর গ্রামের খোকন মিয়া দুইজনই প্রবাসে ছিলেন। 

জীবন-জীবিকার তাগিদে কয়েক বছর আগে বিদেশ চলে যান তারা। সেখানে তেমন সুবিধা না করতে পেরে  পওে দেশে ফিরে আসেন তারা। 

দেশে ফিরে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে ইউটিউবের ভিডিও দেখে কমলা চাষের প্রতি আগ্রহ জাগে তাদের। প্রথমবারের মতো এই উপজেলায় চায়না থ্রি জাতের কমলা চাষের উদ্যোগী হন আলমগীর ভ‚ইয়া। তিনি চুয়াডাঙ্গা থেকে কমলার চারা এনে প্রথমে ২ বিঘা জমিতে রোপন করেন। তখন অনেকেই তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতো। 

১ বছর পর তার রোপন করা চারা গাছে কমলা আসতে শুরু করে। পরে তার করা বাগান দেখে ছতুরপুর গ্রামের  প্রবাস ফেরত খোকন মিয়াও চায়না ও দার্জিলিং জাতের কমলা চাষে উদ্ধুদ্ধ হয়ে বাগান করেন। বর্তমানে তারা দুইজনই চায়না ও দার্জিলিং জাতের কমলা চাষে সফল হয়েছেন। কমলা চাষে তাদের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। 
বিগত বছর গুলোর তুলনায় এ বছর কমলার ফলন ভালো হয়েছে। পুরো বাগানে সবুজ পাতার আড়ালে ঝুলছে হলুদ রঙের কমলা। 

ছতুরপুর গ্রামের কমলা চাষি খোকন মিয়া জানান, দুই বিঘা জমিতে ৬০টি দার্জিলিং এবং ১০০ টি চাইনা থ্রি জাতের কমলার চারা রোপণ করে বাগান গড়ে তুলি। ইউটিউব দেখে বাগানের পরিচর্যা করে ভালো ফলন পেয়েছেন তিনি। বাগানের গাছে-গাছে সবুজ পাতার আড়ালে ঝুলছে পাকা রসালো কমলা। খোকন মিয়া আরো বলেন, গত বছর ১ হাজার কেজির বেশি কমলা বিক্রি  করেছেন। এবছর দ্বিগুণ ফলন এসেছে। 

প্রতি কেজি চায়না থ্রী কমলা ১৮০ টাকা কেজি ও দার্জিলিং জাতের কমলা ২৫০ টাকা কেজি মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। বাগান থেকে ক্রেতারা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে হয়নি। দর্শনার্থীরা এসে দেখে বাগান থেকেই কমলা ক্রয় করছেন। বাগান করার সময় গ্রামের অনেকেই বলেছিলেন এই এলাকায় কমলার চাষ হবে না। আমি মানুষের কথায় কান না দিয়ে নিজের মত করে চেষ্টা করেছি। আমার বাগান থেকে এ বছর অন্তত ৫ লাখেরও অধিক টাকার কমলা বিক্রির আশা করছি।

বিজয়নগরে প্রথম কমলা চাষি আলমগীর ভূইয়া জানান, দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে মাত্র দুই বিঘা জমি ১৬ বছরের জন্য বর্গা নিয়ে ইউটিউব দেখে চায়না কমলা-থ্রি জাতের কমলার চাষ শুরু করেন। চার বছর আগে ১৭০টি চায়না কমলার চারা রোপণের পর সফলতার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন তিনি। চারা লাগানোর পর অনেকেই তাকে নিরুৎসাহিত করলেও হাল ছাড়েননি  তিনি। মাত্র ৪ লাখ টাকা নিয়ে সাহসিকতার সাথে শুরু করেন চাষাবাদ। এখন সবুজ পাতার ফাঁকে-ফাঁকে ঝুলছে নজরকাড়া ছোট-ছোট হলুদ রঙের চায়না কমলা। গত বছরের তুলনায় এবছর ফলন ভালো হয়েছে। গত বছর তার বাগান থেকে ১৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকার কমলা বিক্রি করেছিলেন। এবছর আরো বেশি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।

এদিকে বিজয়নগরে কমলা চাষের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হলে বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা বাগান দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন। বাগানে এসে ফটোসেশন, সেল্ফি তুলতে দেখা গেছে অনেককেই। একপর্যায়ে কমলা বাগান এখন পর্যটনের ভ্যানুতে রূপ নিয়েছে। কমলার স্বাদ নিতে ভ্রমণ পিপাসুরা আসছেন প্রতিনিয়ত। বাগান পরিদর্শন শেষে টাটকা কমলা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। 

এখানকার কমলা স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলাতেও পাইকাররা এসে নিয়ে যাচ্ছেন। কমলা বাগানের এমন দৃশ্য দেখতে প্রতিনিয়ত ভীড় জমান দর্শনার্থীরা। চারদিকে এমন দৃশ্য দেখে আর বাগানে কমলা খেয়ে তুষ্টির কথা জানান তারা।

উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যমতে, বিজয়নগর একটি কৃষিতে সম্ভবনাময় উপজেলা। এ উপজেলায় নানা সবজি ও ফলমূল আবাদ হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ অঞ্চলের লিচুর খ্যাতি পুরো দেশ জুড়ে। কাঁঠাল, পেয়ারা, ড্রাগন, আম, আনারস, বড়ই, গ্রীণ মাল্টা চাষ হচ্ছে। এরই মধ্যে ৩/৪ বছর পূর্বে প্রথম চায়না কমলা চাষ শুরু হয় পরীক্ষামুলক ভাবে। তবে এখন দেখা যাচ্ছে এ অঞ্চলের মাটিতে চায়না কমলাও বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা যাবে। তাই নতুন করে কমলা চাষে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন। এখন পযর্ন্ত ২ হেক্টর জমিতে চায়না কমলা আবাদ করেছে দুইজন কৃষক। সামনে কমলার বাগান আরো বাড়বে বলে আশা। কৃষি বিভাগ এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

আখাউড়া থেকে কমলা বাগান দেখতে আসা খাজিদা আক্তার বলেন, কমলা বাগানে এত সুন্দরভাবে কমলা ঝুলে আছে যা দেখে মন জুড়িয়ে গেল। আমাদের পার্শ্ববর্তী এতো সুন্দর কমলা বাগান তা জানতাম না। ফেসবুকের ছবি দেখে বাগানে এসেছি। কমলা বাগান দেখে আমি মুগ্ধ। আর কমলা খেয়ে দেখলাম অনেক সুস্বাদু।

বাগানে পরিচর্যা ও প্রতিনিয়ত কাজ করেন ছাত্তার মিয়া । তিনি বলেন, বাগান দেখাশুনা সহ কমবেশি সব কাজ করি। এই বাগানে আমরা ৩/৪ জন কাজ করি। এখানে কাজ করে আমাদের পরিবারের অর্থের যোগান দিচ্ছি।

এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা কৃষি অফিসার সাব্বির আহমেদ বলেন, জমি উপযোগী হওয়ায় উপজেলায় কমলা ও মাল্টা বাগানের আবাদ ক্রমশ বেড়েই চলছে। বাগান করে সফল হচ্ছেন কৃষকেরা। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

যাযাদি/ এম