ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। মারাত্মক ভাবে ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। দীর্ঘ পথ মাড়িয়ে উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়ন থেকে সাহেলা বেগম এসেছেন নিজের এবং তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় ফেরত যেতে বাধ্য হন।
শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন অপর এক রোগী চরমুথুরা থেকে আবুল কালাম (৫৭) নামে একবৃদ্ধ। সকাল ১০ এসে ১২ টার সময় সিরিয়াল ধরে ডাক্তার দেখাতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় তাকে।
এরকম অনেক বিভোগেরই চিকিৎসক-সহ বিপুল সংখ্যক জনবল সংকট নিয়ে চলছে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দৈন্দন্দিন কাজ। অথচ উপজেলার অপেক্ষাকৃত দরিদ্র শ্রেণির লোকজন প্রতিদিনই ভীড় করছেন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে কিন্তু ডাক্তারসহ অন্য সেবা দানকারীদের সংকটে পাচ্ছেনা কাঙ্খিত স্বাস্থ্য সেবা।
জানা গেছে, ষাটের দশকে স্থাপিত উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালটি ২০২১ সালের ১৭ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অনুমোদনে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত হয়। হয়েছে অকাঠামোগত উন্নয়নও। কিন্তু বর্তমানে ৬ লক্ষাধিক লোকের চিকিৎসা সেবার জন্য ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে জনবল কাঠামো অনুমোদন না হওয়ায় কার্যত চিকিৎসা সেবা আগের মতোই রয়েছে।
ফলে একটি পৌরসভাসহ ১৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৬ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার অন্যতম ভরসাস্থল ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ছে বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর।
হাসপাতাল সূত্র জানায় , বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এছাড়া নিয়মিত জরুরি বিভাগে প্রায় ১০০’শ জন এবং অন্তঃবিভাগে ৭৫ থেকে ৮৫ জন রোগী চিকিৎসা নেন। এর পরেও রোগীর চাপ থাকায় মেঝেতে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন রোগীরা।
বর্তমানে ৩১ শয্যার হাসপাতালে মোট চিকিৎসক সংখ্যা ৩৮জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ২৪জন। এদের মধ্যে আবার বেশ কয়েকজন সাব সেন্টার থেকে ডেপুটেশনে এনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছেন। অথচ ৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবল কাঠামো অনুমোদন হলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে চিকিৎসকসহ সকল শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে ১১৩জন। এর মধ্যে যাদের কর্মস্থল এখানে রয়েছে এরকম বেশ কয়েকজন প্রেষণে অন্যত্র রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে একজন চিকিৎসককে দৈনিক একশ থেকে দেড়শ রোগী দেখতে হয়। যেখানে একজনকে ৩০ থেকে ৪০ জনের বেশি রোগী দেখা উচিত নয়। এভাবে একটি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চলতে পারে না।
হাসপাতালের আরএমও ডা. মুজাম্মেল হোসেন বলেন, হাসপাতালেই চিকিৎসক সংকট রয়েছে। ফলে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবাদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার দায় এসে পড়ে চিকিৎসকদের ঘাড়ে। তার পরেও রোগীদেরসেবা দিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, ৫০ শয্যার জনবল কাঠামো অনুমোদনের জন্য ইতিপূর্বে কয়েকদফা চিঠির পর সর্বশেষ গত ২০ জুন আমরা চিঠি দিয়েছি। আশাকরছি কর্তৃপক্ষ বৃহৎ এই উপজেলার জনগোষ্ঠীর কথা ভেবে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া আমাদের হাসপাতালটিতে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেই নানা রোগে আক্রান্ত রোগীরা সেবা নিতে আসেন। সে হিসেবে খুব কম সংখ্যক জনবল দিয়ে বিশাল সংখ্যক মানুষের সেবা দিতে হয় আমাদের।
যাযাদি/এআর