প্রাচীন ঝালকাঠি পৌরসভার কোটি কোটি টাকার গাড়ি অকেজো
প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৩৮
বাংলাদেশের প্রাচীন পৌরসভা গুলোর মধ্যে একটি হলো ঝালকাঠি পৌরসভা। ২০০০ সালে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয় এই পৌরসভাটি। প্রথম শ্রেণীর এই পৌরসভার চত্তরে গিয়ে দেখা যায় খোলা গ্যারেজে দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পরে আছে কোটি কাটি টাকা মুল্যের সরকারি ২২ টি বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। যার আনুমানিক মুল্য ৩ কোটি টাকার অধিক। এর মধ্যে ভারী ট্রাক, রোলার, লোডার, ডাবল কেবিন পিকাপ, মাইক্রোবাস, কার ক্যরিয়ার, ডাম্পার ট্রাক, বীম লিফটার রয়েছে। যার বেশিরভাগই অকেজো। মেরামতের নেই কোন বরাদ্দ, নিলামে রয়েছে আইনগত বাধা। এমন অবস্থা সৃষ্টিতে বিগত মেয়রদের খামখেয়ালীপনাকেই দায়ী করছেন পৌর কর্মকর্তাদের অনেকে।
গনমাধ্যমে নাম প্রকাশ না করার শর্তে যানবাহন শাখায় কর্মরত অনেকেই জানালেন, ‘এই পৌরসভার সাবেক মেয়রদের আমলে তাদের গাফিলতির কারনে ধংস হয়েগেছে নতুন নতুন গাড়ি গুলো। এর মধ্য সবচেয়ে বেশি গাড়ি নষ্ট হয়েছে গত ৮ বছরে। সদ্য বিদায়ী মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার গাড়িগুলো ষ্টার্ট করার মতো তেলটুকুও বরাদ্দ দিতেন না। অনেক মেশিন ও গাড়ির মবিল ৮ বছরেও পরিবর্তন তিনি করেননি। এই খামখেয়ালীপনাই কোটিকেটি টাকার সরকারী গাড়ি ধ্বংসের মুল কারন।
পৌর এলাকার প্রবীণ নাগরীক সাবেক কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল সাহা বলেন, ‘পুরোপুরি নষ্ট গাড়িগুলো নিলাম করে দেয়া উত্তম। নচেৎ ভবিষ্যতে খোলা গ্যারেজে ধাকা গাড়ির ইঞ্জিনগুলোও চুরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর আংশিক মেরামতের উপযোগী যানবাহনগুলো বরাদ্দ এনে মেরামত করে সচল রেখে রেজুলেশন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পারটাইম ভাড়া দেয়া উচিৎ। তাহলে গাড়িগুলো সচল থাকবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের দেয়া যানবাহন গুলো পৌর কম্পাউন্ডের ভেতরে খোলা গ্যারেজে অযত্মে অবহেলায় বছরের পর বছর ফেলে রেখে যন্ত্রাংশ চুরির সুযোগ করে দেয়ার জন্য সাবেক মেয়রদেরকেই দায়ী করছেন পৌর কর্মচারী ও নাগরিকরাও।
এ পৌরসভার যানবাহন শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. নাজমুল হাসান বলেন, ‘বেশির ভাগ গাড়ী মেরামতের পুরোপুরি অযোগ্য। আর যেসব গাড়ি আংশিক নষ্ট রয়েছে সেগুলো বিগত মেয়ররা মেরামত না করে বছরের পর বছর খোলা গ্যারেজে ফেলে রাখায় চুরি হয়ে গেছে ব্যাটারীসহ অনেক যন্ত্রাংশ। এর বাইরে কিছু যানবাহন আছে যা হালকা মেরামত করলে চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব। বর্তমানে মাত্র ২ টি ট্রাক এবং ৩টি রোলার চলমান আছে, যা পৌরসভার কার্য সম্পাদনের জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়।
ঝালকাঠি পৌরসভার বিভিন্ন শাখা প্রধানরা জানিয়েছেন, 'আওয়ামীলীগের শাসনামলে নৌকা প্রতীক কিনে দু’বার মেয়র হওয়া লিয়াকত আলী তালুকদার গত ৮ বছর তার মেয়াদকালের পুরোটাই ছিলেন বে-খেয়ালী। তার নেতা আমির হোসেন আমুর তাবেদারীতেই পাড় করেছেন ৮ টি বছর। নজর দেননি পৌরসসভার যানবাহন শাখায়। কোটি কোটি টাকার গাড়ির মালামাল চুরি এবং অযত্ন ও অরক্ষিত ভাবে ফেলে রেখে গাড়িগুলো নষ্ট করার দায় তিনি এড়াতে পারবেন না।
পৌর নাগরিক প্রশান্ত দাস হরি বলেন, ‘যথাসময়ে নিলাম না করায় রাষ্ট্রের অর্থে নতুন ক্রয় করা কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে সরকারি সম্পদ এভাবে নষ্ট হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশ। সামান্য ত্রুটির কারণে যে গাড়িগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে সেগুলো মেরামতের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। অথবা সরকারি প্রকৃয়ার মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করা যেতে পারে। তবে নিলাম প্রক্রিয়ায় যদি দীর্ঘ সূত্রিতা হয় তাহলে যত দিন বাড়বে ততই এর বিক্রয় মূল্য কমে যাবে। এ কারণে পৌরকর্তৃপক্ষকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে এসব গাড়ি ব্যবহার উপযোগী করতে হবে অথবা নিলামে বিক্রি করে দিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ জমা করতে হবে।
ঝালকাঠি পৌরসভার প্রশাসক (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) কাওছার হোসেন বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেয়ার পর দেখলাম কিছু গাড়ির বডি পুরোপুরি পচে গেছে, ইঞ্জিন বিকল। ১৭ টি গাড়ী আছে যার কোনটিই রেজিষ্ট্রেশন করেননি সাবেক মেয়ররা। সরকারী বিধি অনুযায়ী নিলাম করতে হলে গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন থাকতে হবে। অন্যথায় মন্ত্রনালয় থেকে নিলামের অনুমতি পাওয়া যাবেনা। এককথায় আইনি জটিলতায় আটকে আছে নিলাম প্রকৃয়া। আর যেগুলো আংশিক বিনষ্ট আছে সেগুলো মেরামত করে সচলের পরিকল্পনা আমাদের আছে।
যাযাদি/এসএস