শ্রীমঙ্গলে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব 

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০২৪, ২০:৩৭

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
ছবি : যায়যায়দিন

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী আদি উৎসব পলো বাওয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিচিত এই পলো বাওয়া উৎসবের এ মৌসুমে উজ্জীবিত করে মাছ ধরতে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের জৈতা ছড়ার হাইল হাওরের একটি বিলে শুরু হয় পলো বাওয়া। দল বেঁধে লোকজন বিলের মধ্যে পলো হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শুরু হয় মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। এ উৎসবের মধ্য দিয়েই স্থানীয়রা জানান দিল পুরোনো সংস্কৃতির। সকাল থেকে মনের আনন্দে পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দেন উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষ। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলে পলো বাওয়া উৎসব।

এ উৎসবে যোগ দিতে ছেলে-বুড়োসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি ছুটে আসেন হাইল হাওরের বিলে। কারোও হাতে পলো, ছিটকি জাল, উড়াল জাল, লাঠি জাল, হাত জাল (ঠেলা জাল)। দল বেঁধে কয়েক গ্রামের কিশোর, যুবকসহ বৃদ্ধরাও অংশগ্রহন করেন এই পলো উৎসবে। তবে পলো বাওয়া উৎসবের আনন্দ যুবক-বৃদ্ধের চেয়ে ছোট ছোট শিশুদের মধ্যে একটু বেশিই দেখা যায়। তারা তাদের বাবা-চাচা-দাদা-মামা-ভাইয়ের হাত ধরেই উৎসবে শরিক হতে এসেছে। 

এতে কয়েক’শ শৌখিন মাছ শিকারি অংশ নেয় বলে মির্জাপুর ইউনিয়নের মইনুল ইসলাম গেদু যায়যায়দিনকে জানান।

এসময় নানা বয়সের উৎসুক নারী পুরুষ ও আয়োজকরা তাদের মাছ শিকার করা দেখেন বিলের পাড়ে দাঁড়িয়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একসময় পলো দিয়ে মাছ শিকারের অপরূপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হতো গ্রামের ছোট-বড় সকল বয়সী মানুষ। কম বেশি সবাই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করতো। 

এখন হাইল হাওরে নেই আগের মতো মাছ। তাই হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার সেই ঐহিত্য। পলো বাওয়ায় ধরা পড়া মাছের মধ্যে শোল ও বোয়ালই বেশি। অনেকেই আবার গজার মাছ ধরতে সক্ষম হন।

একসময় হাওরের পানি কমার সাথে সাথে গ্রামের মানুষ ঠান্ডা জলকে উপেক্ষা করে বাঁশ দিয়ে তৈরি পলো দিয়ে নদী-নালা, খালবিল ও হাওড়গুলোতে সারিবদ্ধভাবে মাছ শিকার করতে দেখা যেতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই পলো বাওয়া উৎসব। দীর্ঘদিন পর প্রায় বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে স্থানীয়রা আয়োজন করে পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসবের। তারা হারানো ঐতিহ্যকে ফেরাতেই এই আয়োজন করেন। পলো বাওয়া শেষে ভাগ্যবানরা হাসিমুখে শিকার করা নানা প্রজাতির মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরেন।

যাযাদি/ এম