প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে একই কর্মস্থলে (থানায়) কর্মরত রয়েছেন রাজশাহীর দুর্গাপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রাজ্জাক। তার বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় কোটি কোটি টাকা উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে। নিজ এলাকায় গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। একই কর্মস্থলে ২ বছরের অধিক থাকার নিয়ম না থাকলেও একাধিকবার বদলীর আদেশ হলেও অদৃশ্য শক্তিতে বদলির আদেশ ঠেকিয়ে রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
তিনি ২০২১ সালের মাঝামাঝি দুর্গাপুর থানায় যোগদান করে অদ্যবধি একই থানায় দাপটের সাথে চাকুরী করে যাচ্ছেন। তিনি পদবীতে এসআই হলেও নিজেকে ওসির সমতুল্য ভেবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চষে বেড়ান পুরো উপজেলা জুড়ে।
রাজশাহীর দুর্গাপুর থানা এলাকায় বিভিন্ন খাত থেকে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। একই স্থানে দীর্ঘদিন চাকরি করায় এমনটা হচ্ছে বলে অভিযোগ একাধিক ভূক্তভোগীর। তার অবৈধ রোজগারের পেছনে রয়েছে উপজেলার দালাল শ্রেনীর রাজনৈতিক নেতা। পৌরসভাসহ প্রতিটি ইউনিয়নে তার নিজের তৈরী করা বিশ্বস্ত কিছু সোর্স রয়েছে।
দুর্গাপুর থানার সেকেন্ড অফিসার হিসেবে পরিচিত এসআই আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরে দুর্গাপুর উপজেলা ও তার পূর্ব কর্মস্থল সীমান্তঘেষা বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকজন পুকুর খননকারী ও ভেকু দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উপজেলাব্যাপী তিন ফসলী জমিতে অবৈধ পুকুর খননে সহযোগীতা করে কোটি কোটি টাকা আয় করে নিজ এলাকায় বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।
এমনকি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন খাত থেকে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। একই স্থানে দীর্ঘদিন চাকরি করায় এমনটা হচ্ছে বলে অভিযোগ একাধিক ভূক্তভোগীর। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- নিরাপরাধীকে অপরাধী সাজানো, ভুল তথ্যে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি, মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলা ইত্যাদি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আব্দুর রাজ্জাকের সাথে এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাদের মাধ্যমে মাদক বেচাকেনা ও সহায়তায় করেন তিনি। টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পাতানো মাদক উদ্ধারসহ বিস্তর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহায়তায় এই অপরাধের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন এসআই আব্দুর রাজ্জাক।
দুর্গাপুর থানায় কর্মরত নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক এসআই অভিযোগ করে বলেন, আদালত ও দুর্গাপুর থানায় দায়েরকৃত খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর মামলা গুলো তিনি তদন্তের জন্য নিজে নেন। এই মামলা গুলো ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে ওসি ও সার্কেল এএসপিকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে সুজিয়ে পক্ষে বিপক্ষে রিপোর্ট দিয়ে দিয়ে থাকেন। তার এই অপরাধের বিরুদ্ধে কেউ মূখ খুললে বা অভিযোগ করলে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয় এসআই আব্দুর রাজ্জাক।
দুর্গাপুর থানায় কর্মরত অবস্থায় সাড়ে তিন বছরে তিনবার বদলীর আদেশ আসলেও বদলি ঠেকাতে শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে সিনিয়র কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে থেকে যান একই কর্মস্থলে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুর্গাপুর থানায় দাপ্তরিক কাজ করা এক কনস্টেবল বলেন, দুর্গাপুর থানায় আমার যোগদানের প্রায় দুই বছর হতে চললো, আমি যোগদানের পর আব্দুর রাজ্জাক স্যারের দুইবার বদলীর আদেশ এসেছিলো। কিন্তু তিনি জেলা পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের কাছে অসুস্থতার কারন দেখিয়ে বদলী স্থগিত করে এই থানাতেই আছেন। শুনলাম সম্প্রতি আবারো এসআই আব্দুর রাজ্জাকের বদলীর আদেশ হয়েছে। কিন্তু সে এবার পরিবারের অসুস্থতার কারন দেখিয়ে বদলী স্থগিতের জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট ধর্না দিচ্ছেন।
বর্তমান কর্মস্থলে একই সাথে চাকুরিরত একাধিক সহকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসআই আব্দুর রাজ্জাক দিনে যা আয় করেন বিকাশের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন পরিবার ও নিকটস্থ আত্মীয় স্বজনের কাছে ।
সম্প্রতি এসআই আব্দুর রাজ্জাকের বদলীর আদেশ এসেছে এমন খবর শোনা গেলেও বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূরুল হোদা বলেন, বদলি প্রক্রিয়াটা পুলিশের একটা রুটিন কাজ। এটা রুটিন মাফিক হয়ে থাকে। তবে এসআই রাজ্জাকের বদলির বিষয়ে আমার কাছে এ পর্যন্ত কোন বার্তা আসে নাই। পূর্বে বদলি হয়েছে কিনা এ বিষয়টিও আমার জানা নেই।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
যাযাদি/ এম