পাবনার ভাঙ্গুড়া প্রেস ক্লাবের অবৈধ পকেট কমিটি বাতিলের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারক লিপি প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর)বিকাল ২টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাবের ৬ জন যুগ্ম আহবায়ক সহ ১২ জন সদস্য স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
ঘটনার সূত্রে প্রকাশ , ভাঙ্গুড়া উপজেলায় কর্মরত সকল সংবাদ কর্মীকে একত্রিত করে একটি বৈষম্যহীন প্রেসক্লাবের কমিটির গঠনের উপলক্ষে ১৭ আগস্ট রাত্রি ৭টায় অনুষ্ঠিত সভায় ১১ সদস্য বিশিষ্ট ' ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাবের ' একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহবায়ক কমিটি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১১নভেম্বর পর্যন্ত সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
মো. মাহবুব উল আলম বাবলু আহবায়ক কমিটির আহবায়ক হবার পর থেকে প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী ও স্বেচ্ছাচারিতা মাধ্যমে মিটিং-সভা করতে থাকে। আহবায়ক কমিটির মিটিংয়ে সকল সদস্যদের না জানিয়ে তার আজ্ঞাবাহ পাঁচ/ছয় জন সদস্যকে নিয়ে সকল সিদ্ধান্ত কার্যকর করেন। আহবায়ক কমিটির সদস্য সহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকদের সদস্য পদ লাভের আবেদন জমা না নেওয়ার পক্ষপাত-স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ রয়েছে আহবায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে।
ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে, তিনি আহবায়ক কমিটির মিটিংয়ের মাধ্যমে আবেদনকারীদের জমাকৃত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বৈধতা সদস্যদের তালিকা প্রকাশ করেননি।গত ১৪ নভেম্বর রাত আটটার দিকে উপজেলা সদরের বাইরে দিলপাশার ইউনিয়নের পাটুল গ্রামে একটি ভাতের হোটেলে তার আজ্ঞাবহদের নিয়ে রাতারাতি একটি পকেট কমিটি করেন।
সর্বজন স্বীকৃত প্রেসক্লাবের মতো পবিত্র প্রতিষ্ঠানে পকেট কমিটির বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এনিয়ে ভাঙ্গুড়ায় নবীণ-প্রবীণ সংবাদপত্র কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এই অবৈধ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ক্ষমতালোভী কথিত সভাপতি মাহবুব উল আলম বাবলু তথা কথিত কমিটিকে সরকারি সকল দপ্তর থেকে আমন্ত্রন পত্র সহ অন্যান্য সহযোগিতা না করার দাবি জানিয়েছেন ভাঙ্গুড়ায় কর্মরত সকল সাংবাদিকবৃন্দ।
ঘটনার নেপথ্যে আরোও জানা গেছে, ১৯৯০ সালে ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি পদ লাভ করার পর থেকেই অদ্যবধি তিনি প্রেস ক্লাবের গঠনতন্ত্রের কোন নিয়ম তোয়াক্কা না করেই উনার কাছের আত্মীয়-স্বজনদের বিভিন্ন পত্রিকার নাম ব্যবহার করে প্রেসক্লাব গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পদে রেখে নির্বাচন ছাড়াই সভাপতি পদ দখলে রেখেছেন।
ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাবের কমিটি তালিকায় ১৬ নম্বর সদস্য ও দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম আপন প্রেসক্লাবে তার অবস্থান নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন।
পোস্টে লেখা ছিলেন, প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুব আলম বাবলু নিজের সভাপতির পদ টিকিয়ে রাখতে প্রেসক্লাবের ১৬ জন সদস্যর মধ্যে নিজের ভাগ্নে মুক্তা সহ ৭ জন ভুয়া সাংবাদিকে গোপনে কর্মরত পত্রিকা ছাড়াই অন্য নামী-দামী পত্রিকার নাম ব্যবহার করে প্রেসক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ পদে অসীন করে সদস্য বানিয়ে রেখেছেন।
যে সকল পত্রিকার ভূয়ানাম ব্যবহার করা হয়েছে সে সকল পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীদের নজরে আসে। সম্পাদক মন্ডলী ক্লাবের সভাপতি মাহবুব আলমকে প্রেসক্লাবের কমিটিতে পত্রিকার নাম সংশোধন করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। অন্যথায় মামলা করবেন বলে জানিয়ে দেন।
মাহবুব আলম বাবলু উপায় না পেয়ে প্রেসক্লাবে জরুরী মিটিং ডেকে সকল সদস্যের উপস্থিতিতে রেজুলেশনের মাধ্যমে কমেটি বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করেন এবং পরবর্তীতে ঐ সকল ভুয়া সদস্যদের বাদ দিয়ে মূল ধারার সাংবাদিকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বাবলুর মহাশক্তি সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মকবুল হোসেনের স্যালক থেকে হয়ে যান,পাবনা জেলা বিএনপি সদস্য সচিব মাসুদ খন্দকারের দুলাভাই।সে তার প্রভাব খাটিয়ে আবারোও প্রেসক্লাবে সভাপতি হতে শুরু করেন স্বৈরাচারিতায়।
ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাবের আহবায়ক কমিটির এক নম্বর যুগ্ম আহŸায়ক ও ভাঙ্গুড়ার প্রবীণ সংবাদকর্মি বিকাশ চন্দ্র চন্দ জানান,প্রেসক্লাব'র মতো একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে গত আওয়ামী লীগ শাসনকালে এমপি আলহাজ্ব মো. মকবুল হোসেনকে প্রধান উপদেষ্টা করে কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমান বিএনপি হয়ে তার আত্মীয় নাম ভাঙ্গীয় ভাঙ্গুড়া প্রেস ক্লাবের গঠনতন্ত্র তোয়াক্কা না করে রাতের আঁধারে একটি পকেট কমিটি গঠন করেছে যা অতি নিন্দানীয় ও দুঃখজনক।এই পকেট কমিটি ভাঙ্গুড়ায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ বর্জন করেছে।
এ বিষয়ে প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান যুগ্ন আহবায়ক মোঃ রায়হান আলী এই অবৈধ কমিটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, স্বৈরাচারী বাবলু ১৫ বছর এমপি আলহাজ্ব মোঃ মকবুল হোসেনের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।বর্তমানে তার আত্মীয় জেলা বিএনপি সদস্য সচিব সেই ক্ষমতা খাটিয়ে আবারো প্রেসক্লাবের মতো পবিত্র প্রতিষ্ঠানকে ধব্বংস করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি পাশাপাশি আমাদেরকেও হয়রানি করছে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)মোছা.নাজমুন নাহার জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারক লিপি ও তার বরাবর অভিযোগ প্রাপ্তি স্বীকার করে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এরকম চলে আসছে। বিষয়টি আমি দেখছি। আপনারা পাবনা প্রেসক্লাবকেও বিষয়টি অবগত করেন।
যাযাদি/ এম