পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পর্যটন শিল্প বিকাশে যুক্ত হলো ‘খাসি কমিউনিটি ট্যুরিজম’। প্রথমবারের মতো কমিউনিটি ব্যাজ ট্যুরিজমের অংশ হিসেবে এটি যুক্ত করা হলো। উপজেলার ৬নং হোসনাবাদ খাসিয়া পুঞ্জিতে মঙ্গলবার বিকালে কমিউনিটি ব্যাজ ট্যুরিজমের উদ্বোধন করেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু তালেব।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ জোনের অফিসার ইনচার্জ মো. কামরুল হাসান চৌধুরী, উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা মৃনাল কান্তি দাশ, উপজেলা এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ হোসেন খাঁন, সমাজসেবা কর্মকর্তা অসিম কুমার ধর, উপজেলা খাসি সম্প্রদায়ের সমন্বয়ক তাজুল ইসলাম জাবেদ, ৬নং হোসনাবাদ খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী (খাসি নেতা) ওয়েল সুরং, কমলগঞ্জ হাজারীবাগ খাসিয়া পান পুঞ্জির মন্ত্রী প্রিচিংলী সুংঙ সচিয়াং প্রমুখ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু তালেব সাংবাদিকদের বলেন, শ্রীমঙ্গল হচ্ছে পর্যটনের জন্য অপার সম্ভাবনাময়ী এক উপজেলা ও নানান ভাবে সমৃদ্ধশালী একটা পাহাড়ী এলাকা। যেখানে রয়েছে বিভিন্ন জাতী গোষ্টির বসবাস। রয়েছে সবুজে ঘেরা চা বাগান, পাহাড়, হাওড়-বাওড়, বাইক্কাবিল ও বিভিন্ন নদ-নদী। শ্রীমঙ্গলের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত উপজাতি জনগোষ্ঠী খাসিয়া, মণিপুরী, ত্রিপুরা ও গারোদের জীবনাচার, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কারণেও এ অঞ্চলের নাম বিশ্বের কাছে সুপরিচিত। গেজেটেড ২৬টি আদিবাসী জাতী খাসিয়া, মনিপুরি, ত্রিপুরা, সাওতাল, গারো ছাড়াও আরো অনেক জাতী-গোষ্টি রয়েছে শ্রীমঙ্গলে। কিন্তু এখানে কমিউিনিটি ট্যুরিজমের কোন ব্যবস্থা ছিল না। আজ উদ্বোধন হওয়ায় পর্যটন শিল্পে নতুন সংযুক্ত হলো ‘খাসি কমিউিনিটি ট্যুরিজমের’। আর এতে উপজেলার পর্যটন শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন সাধিত হবে।
খাসিয়াদের প্রধান আয়ের উৎসই হচ্ছে খাসিয়া পান চাষ করা। বিভিন্ন কারণে পানের দাম কমে যাওয়ায় প্রত্যন্ত এলাকার খাসিয়া জনগোষ্টি অর্থ সংকটে ভোগে থাকেন। এসব বিষয় বিবেচনা করে এই কমিউিনিটি ট্যুরিজম যদি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে তাদের বাড়তি ইনকামের একটা ব্যবস্থা হবে। পরিবেশের সাথে ভারসাম্য রেখে পরিচালনা করলে তারা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হবে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে বসবাস করলেও এখানকার খাসিয়া ছেলে মেয়েরা অনেক স্মার্ট। তারা খাসি, বাংলা, হিন্দীর পাশাপাশি ইংরেজিতেও কথা বলতে পারে। সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পরিক্ষামূলক ভাবে এখানে ইকো সিস্টেমে ঘর নির্মান করে দেওয়া হবে। তবে যারা এখানে আসবে তারা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমেই আসতে হবে। যাতে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়, এবং এই কমিউনিটি যাতে তাদের দ্বারা সাফারার না হয় বা কোন ধরনের ক্রাইম যাতে সংগঠিত করতে না পারে। এছাড়া তাদের পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয় সেটা ইনশিয়র করে আমরা এখানে ট্যুরিস্ট পাঠাব।
তিনি বলেন, পরিক্ষামূলক ভাবে যদি কমিউিনিটি ট্যুরিজমে সফল হওয়া যায়, তাহলে সরকারি উদ্যোগে আরো কিছু করে দিব, যেখানে তাদেরও ইনভেস্ট থাকবে। তাদের ইনভেস্ট থাকলে সার্ভিসের প্রতি তাদের আগ্রহ থাকবে। চমৎকার এই পাহাড়ের পুঞ্জিতে ট্যুরিস্টরা আসলে খাসিয়াদের কৃষ্টি কালচার ও প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের অনুভব পাবে বলে আমার বিশ্বাস।
যায়যায়দিন-এর সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম রুম্মনের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাতায়াতের সড়কটি মসৃন না হলেও আমরা জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে কিছু কিছু সড়কের অংশ বিশেষ এবং একটা কালভার্ট মেরামতের ব্যবস্থা করব। সবকিছু এক সাথে করা সম্ভব নয়, যাতায়াতের সড়ক মেরামত করতে কিছুটা সময় লাগবে। আবার অনেক পর্যটকই আসেন পাহাড়ের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এবং পাহাড়ি রাস্তা দেখার জন্য তাই পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করেই রাস্তা মেরামত করা হবে।
উল্লেখ্য, ৬নং হোসনাবাদ খাসিয়া পুঞ্জি শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দক্ষিন-পূর্ব দিকে অবস্থিত। ভারতের সীমানা ঘেষা প্রায় ১০০ একরের ছোট্ট এই পুঞ্জি প্রায় ৪৫ বছর আগে হোসনাবাদ চা বাগানের তৎকালিন মালিকের কাছ থেকে লিজ নিয়ে বসতি শুরু করেন খাসিয়ারা। তখন থেকেই বিভিন্ন বনজ গাছের পাশাপাশি সুপারি গাছে খাসিয়া পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা। বর্তমানে ২২টি পরিবার রয়েছে এই পুঞ্জিতে। যার লোক সংখ্যা প্রায় দু’শর কাছকাছি।
যাযাদি/ এসএম