মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

গাংনীতে চলতি মৌসুমে সার সংকট

ডিলারদের কাছে সার নেই, খুচরা বাজারে চড়া দাম
মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর)
  ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:৪৩
ছবি: যায়যায়দিন

কাগজ কলমে সারের সংকট না থাকলেও গাংনীর সর্বত্র চলছে সার সংকট। ডিলার বা সাব ডিলার পর্যায়ে সার সংকট থাকলেও খোলা বাজারে সার পাওয়া যাচ্ছে চড়া মূল্যে। অধিক মূল্যে সার কিনে আবাদ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চাষিরা।

তাছাড়াও উৎপাদন খরচ হচ্ছে বেশি। কৃষি বিভাগ বাজারে সার সংকট নেই বলে দাবী করলেও বাস্তবের সাথে মিল নেই। তবে চড়া মূল্যে সার বিক্রি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

কৃষি অফিসের হিসেব মতে, গাংনীতে বিসিআইসি ও বিএডিসির ৫০ জন ডিলারের মাধ্যমে সার বিক্রি করা হয়। চলতি মৌসুমে বিসিআইসির ডিলারদের ১২ জন ডিলারের প্রত্যেককে চলতি অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ৯৮ মেঃটঃ ইউরিয়া ও বিএডিসির ডিলারদের ৩৭ জনের প্রত্যেককে ১৬.২৫ মেঃটঃ টিএসপি ও ১৭.২০ মেঃ টঃ এমওপি সার বরাদ্দ আসে। শুধু একজন ডিলারের অনুক‚লে ৩২.৫০ মেঃটঃ টিএসপি ও ৩৪.৪০ মেঃটঃ এমওপি সার বরাদ্দ দেয়া হয়।

চলতি মৌসূমে ৭ হাজার ৬৫ হেক্টর গম, ২ হাজার ৯৭৫ হেক্টর সরিষা, ২হাজার ৩৭৫ হেক্টর মসূর, বিভিন্ন জাতের সবজি ২ হাজার ১১০ হেক্টর, গোল আলু ও মিষ্টি আলু ২৬৭ হেক্টর, রসুন ১৮৫ হেক্টর, পেঁয়াজ ৮৮১ হেক্টর ও আখ ২৯ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। এ আবাদের অনুকুলে ডিলারদের কাছে যে সার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা উপজেলার চাষিদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। তাই ভোক্তা পর্যায়ে সে সার সংকট দেখা দিয়েছে। চাষিরা ডিলার ও সাব ডিলারদের কাছ থেকে স্বল্প সার পাচ্ছেন। বাকিটা বাইরে খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে নিতে হচ্ছে চড়া মূল্যে।

ষোলটাকা ইউনিয়নের সার ডিলার শহিদুল ইসলাম সাহা জানান, তিনি যে সার বরাদ্দ পেয়েছেন তা নিয়মানিুযায়ি চাষিদেরকে দিচ্ছেন। তবে চাষিদের চাহিদা অনুযায়ি সরবরাহ স¤ভব হচ্ছে না। যাদের ৩ বস্তা দরকার তাদেরকে এক বস্তা দেয়া হচ্ছে। তা না হলে অন্যান্য চাষিরা বঞ্চিত হবেন। মটমুড়া ইউপির সার ডিলার নুরুল ইসলাম জানান, তিনি সার বরাদ্দ পাবার পরপরই চাষিরা সব সার নিয়ে গেছে। এখন দোকানে কোন সার নেই। চাহিদার তুলনায় সার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কম। নতুন করে চাহিদা দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ আসলে চাষিরা সার পাবেন।

চেংগাড়া গ্রামের চাষি রাশিদুল জানান, তিনি এ মৌসুমে ৮ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য শস্য আবাদ করছেন। প্রয়োজনের তুলনায় তিনি সার পাচ্ছেন না। আরো সার প্রয়োজন। কুঞ্জনগরের পেয়াজ ও গমচাষি রফিকুল ইসলাম জানান, সরকারী হিসেবে প্রতিবস্তা টিএসপি ১৩৫০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে কিনতে হচ্ছে ১৬০০ টাকা দরে। একই অবস্থা এমওপি সারে। ১০০০ টাকা বস্তা দর হলেও বাজারে কিনতে হচ্ছে ১২০০ টাকা বস্তা। দোকানে বিক্রির রশিদ চাইলে দোকানীরা সার দিতে চাচ্ছেন না।

কয়েকজন ডিলার জানান, চাষিরা প্রয়োজনের তুলনায় সার বেশি ব্যবহার করেন। অনেকেই সার কিনে মজুদ করেন ভবিষ্যতের জন্য। তাছাড়া অন্যান্যবার তামাক কোম্পানী তামাক চাষিদেরকে বিভিন্ন ধরনের সার দিলেও এবছর কোন সার দেয়নি। চাষিরা খাদ্য শস্য আবাদের সার তামাক চাষে ও মৎস্য চাষে ব্যবহার করছেন। তাই সারের কিছুটা সংকট দেখা দেয়। তবে চলতি মৌসুমে আরো সার বরাদ্দ দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন তারা।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার এমরান হোসেন জানান, গাংনীতে সার সংকট নেই। চাহিদা অনুযায়ি সার বরাদ্দ এসেছে। চাষিরা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বেশি সার ব্যবহার করে। চাষিদেরকে সার অপচয় না করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, চড়া দামে কেউ যদি সার বিক্রি করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মেহেরপুর জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সজল আহমেদ জানান, চড়া দামে সার বিক্রি স্টক রেজিস্টার না থাকা ও ক্রেতাদের রশিদ না দেয়ায় ইতোমধ্যে মেহেরপুরে দুই ডিলঅরকে জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান চলছে। বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে