চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন
প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:১৬
গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৮২ টিইইউএস, যা বিগত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৬,৯৮৬ টিইইউএস বা ৯ দশমিক ০১৬ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে প্রায় ১০ দশমিক ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বেলা ১২ টার দিকে শহীদ মোহাম্মদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৫ দশমিক ৫ হাজার কন্টেইনার স্থিতি ছিল। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ধারণ ক্ষমতার প্রায় ৮৫ শতাংশ এলাকাজুড়ে কন্টেইনার ছিল। তবে গত তিন মাসে পদ্ধতিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে তা ৩৪ হাজারে নামিয়ে আনা হয়। আগে জাহাজের অপেক্ষমাণ সময় ছিল ৬ থেকে ৮ দিন। বর্তমানে অপেক্ষমাণ সময় একদিনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের গত ৪ মাসে ১ হাজার ৬৪৩ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আয়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি এবং একই সাথে রাজস্ব উদ্ধৃত ২৮ দশমিক ০১ শতাংশ বেশি।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি পণ্যের কন্টেইনার পর্যাপ্ত হলে করাচি-চট্টগ্রাম রুটে ভবিষ্যতে নিয়মিত জাহাজ পরিচালনা করতে মালিকরা আগ্রহী। ইতিপূর্বে পাকিস্তানের সঙ্গে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হতো। নতুন রুট চালু হওয়ায় বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। এতে সাশ্রয়ী ব্যয় ও সময়ে উভয় দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে নতুনভাবে গতিশীলতা সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, করাচি বন্দর থেকে লাইনার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রথমবার গত ১১ নভেম্বর এইচআর শিপিং লাইনের অধীনে একটি জাহাজে ৩২৮ কন্টেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম আসে। ১২ নভেম্বর কন্টেইনার খালাস করে চট্টগ্রাম ত্যাগ করে। জাহাজটি মূলত দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে করাচি বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম আসে। জাহাজটির সাধারণ রাউন্টিং হচ্ছে দুবাই জেবল আলী- করাচি-চট্টগ্রাম-ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া-মুন্দা (ভারত)-দুবাই।
তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রতিফলিত হচ্ছে। এই প্রতিকূল অবস্থা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।
জাহাজের এভারেজ ওয়েটিং টাইম কমিয়ে আনা প্রসঙ্গে রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৫ দশমিক ৫ হাজার কন্টেইনারের স্থিতি ছিল। অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মোট ধারণ ক্ষমতার প্রায় ৮৫ শতাংশ অকুপাইড ছিল। বিগত তিন মাসে পদ্ধতিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে তা ৩৪ হাজারে নামিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে জাহাজের এভারেজ ওয়েটিং টাইম ৬ থেকে ৮ দিন হতে একদিনে নেমে এসেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আগমনের পর জাহাজসমূহ অন এরাইভাল বার্থিং পাচ্ছে।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত বর্জ্য অপসারণ এবং এর মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি প্রকল্পে গত তিন মাসে ১ দশমিক ৩৭ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি আগামী ২০২৫ সালের জুন মাসে সমাপ্ত হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে সব ধরনের সিন্ডিকেট, মনোপলি ভেঙে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ইতিপূর্বে ২৩টি শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে যার সুফল ইতোমধ্যে বন্দর ব্যবহারকারীগণ পেতে শুরু করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. হাবিবুর রহমান, সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর এম ফজলার রহমান, সদস্য (অর্থ) মোহাম্মদ শহীদুল আলম, সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর কাওছার রশিদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
যাযাদি/এসএস