কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে মারধর ও ভাঙচুর
ফরিদগঞ্জের গৃদকালিন্দিয়া ও গল্লাক ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ
প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:০৮
বিগত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্ণিং কমিটি বাতিলের পরপরই ফরিদগঞ্জের গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজে ও গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে গত প্রায় একমাস যাবত বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে।
উভয় গ্রুপের পাল্টাপাল্টি হামলা ও কর্মসূচির কারনে গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজে অনির্দিষ্ট কালের জন্য শিক্ষা কর্যিক্রম বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। অপরদিকে, গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজে এডহক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এক পক্ষ কলেজের মূল ফটক ও শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ফলে বছরের শেষ প্রান্তে এসে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতশত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অনিশ্চয়তার মুখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা বাহিনী কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়।
জানা গেছে, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের মনোনীত সাবেক এমপি ড.মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়ার সহধর্মিণী ডা. আনোয়ারা হককে ফরিদগঞ্জের গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজে এডহক কমিটির সভাপতি গোপণে মনোনীত করায় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে রোববার (১৭ নভেম্বর) সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বিএনপির একটি অংশ মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল করে।
এসময় বিক্ষুব্ধদের হাতে কলেজ শিক্ষক লাঞ্ছিত ও কলেজের সিসিটিভি ক্যামেরা যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বের করে দিয়ে তার কক্ষে তালা মেরে দেয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকালে কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কলেজ গেইটে তালা বন্ধ করে আন্দোলন করে।
একই সময়ে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটি অংশ শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এসময় তাদের মধ্যে কয়েক দফায় হাতাহাতি হয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতি কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ এবং পরবর্তীতে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজের পাঠদান অনিদিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রেখেছে।
অপরদিকে, গত ৬ নভেম্বর স্থানীয় বিএনপি নেতা মাহবুব মোরশেদ কচিকে সভাপতি ও কলেজ অধ্যক্ষ হরিপদ দাস’কে সদস্য সচীব করে তিন সদস্য বিশিষ্ট গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজে এডহক কমিটি ঘোষণা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বিএনপির অপর একটি গ্রুপের পর্যায়ের নেতা ডাক্তর আবুল কালাম আজাদও তার অনুসারিরা।
গত ১৭ নভেম্বর এডহক কমিটির সভাপতি মাহবুব মোরশেদ কচি সভা করার ঘোষনা দিলে আজাদের লোকজন কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এই নিয়ে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে উপজেলা প্রশাসন কচি কে ইউএনও অফিসে আসতে বলে। কচি উপজেলা পরিষদে প্রবেশকালে আজাদের লোকজন সেখানে তাকে ঢুকতে না দিয়ে তাকে তুলে নিতে চায়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনা বাহিনী এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে মাহবুব মোরশেদ কচি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে এসে ডাক্তার আজাদ গ্রæপ তাকে অপহরণের চেষ্টা দাবী করে সংবাদ সম্মেলন করে।
এদিকে বিএনপির দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কঠোর অবস্থান এবং তাদের মারমুখি পরিস্থিতিতে কলেজে শিক্ষকরা তাদের ও শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা চিন্তা করে অনির্দিকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়। উপজেলায় স্বনামধন্য দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ হওয়ার খবরে অভিভাবক ও সচেতন মহলের ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পাঠদান না করতে পাড়লে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বিষয়টি দ্রুত শান্তিপূর্ণ সমাধানের দাবি জানান।
দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষরা জানান, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদেও নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা আপাতত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।
এই বিষয় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন জানান, আমি বিষয়টি জেনেছি। এটি খবুই দুঃখজনক। এই ধরনের কলেজ গুলোর কমিটি যেহেতু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেখেন । আমি তাদের বলছি আপনার কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমে বেঘাত সৃষ্টি না করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করেন। কোন অভিযোগ থাকলে আইনি সহযোগিতা নিতে পারেন। তবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা অবশ্যই কঠোর অবস্থানে আছি।
যাযাদি/ এসএম