কেওড়া সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান বৃক্ষ। সুন্দরবনের নদী ও খালের পাড়ে এবং চরে এ গাছ বেশী জন্মায়। কেওড়া গাছ দ্রুত র্বধনশীল। এর উচ্চতা ২০ মিটার এর বেশী। এ গাছের পাতা চিকন ও লম্বা।
কেওড়া ফল আকারে ছোট ও গোলাকার, কেওড়া ফল টক বা অম্ল স্বাদের হয়। এই ফলের বাহিরের শ্বাস ও ছাল সাধারণত খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সুন্দরবন এবং এর র্পাশ্বর্বতী এলাকার মানুষের কাছে কেওড়া ফল অনেক প্রিয়।
লবণাক্ত মাটিতে জন্ম নেওয়া এই উদ্ভিদের শ্বাসম‚ল দেখা যায়। জোয়ার ভাটার পানিতে বেড়ে উঠা সুন্দরবনে শ্বাসম‚ল এই গাছের বায়ুতে থাকা উপাদানগুলো গ্রহণ করতে সাহায্য করে। মিষ্টি পানির এলাকায় এই গাছ জন্মে না বললইে চলে। তবে ইদানিং গ্রাম পর্যায় লবন পানি সংমিশ্রণ করে কেওড়া গাছের চারা তৈরী করে মিষ্টি এলাকায় রোপন করছেন এবং এটি লাভ জনক ফসল হিসাবে অনেকে চাষ করছেন। বর্তমানে কেওড়া প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বাজারে বিক্রী হচ্ছে। বর্তমানে উপজেলার নকিপুর হাটবাজার সহ অন্যান্য বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রী হচ্ছে।
মানুষ কেওড়ার শ্বাস বের করে আচার তৈরী করে বিক্রয় করছেন। এটি প্যাটেন্ট হিসাবে মার্কেটে বিক্রীও হচ্ছে। সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার প্রবীন ব্যক্তিরা কেওড়ার শ্বাস ও ছাল শুকিয়ে খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করছেন। তারা বলছেন এটি পেটের পীড়ায় খুব উপকারী। পুরাতন আমাশয় বা পেটের পীড়ার জন্য কার্যকর।
কেওড়া গাছের পাতা ও ফল সুন্দরবনের হরিণ ও বানরের প্রিয় খাদ্য। এ গাছের নীচে হরিণ ও বানর দল বেঁধে ঘোরাঘুরি করে ফল ও পাতা খাওয়ার জন্য। কেওড়া গাছের কাঠ ঘরের বড়ো, দরজা-জানালা ইত্যাদি তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।
কেওড়া সুন্দরবনরে উঁচু গাছগুলোর মধ্যে অন্যতম। কেওড়া গাছ বাংলাদেশ, ভারত ও মায়ানমার বেশি জন্মে। পাতা সরল, বিপরীতমুখী, চামড়ার মতো। ফুল উভলিঙ্গ। ফল গোলাকৃত এবং ব্যাস ২-৩ মিলিমিটার। একটি ফলে বীজ ১ টা।
বাংলাদেশে আসবাবপত্র ও জ্বালানীর জন্য কেওড়ার কাঠ ব্যবহৃত করেন। অনেকে নার্সরীর মাধ্যমে এ গাছ র্বষা মৌসুমে রোপণ করেন। সুন্দরবনের অন্যান্য গাছরে তুলনায় কেওড়া গাছ দ্রুত বড় হয়।
তবে বহু বছর আগে থেেক মানুষ ও মাছের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এটি। এই ফল রান্না করে খাওয়া যায়। টক স্বাদযুক্ত হওয়ায় কাঁচা লবণ দিয়ে খাওয়া যায়। সম্প্রতি সুন্দরবন এলাকার মানুষের পাশাপাশি অন্য এলাকার মানুষের কাছে এ ফলের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
অনেকে কেওড়া আচার, চাটনি তৈরি করে গ্রামের হাট বাজারে বিক্রী করে সংসার নির্বাহ করেন। কেওড়া ফলটি পচে গেলে মৎস্য চাষীরা মাছের খাদ্য হিসাবেও ব্যবহার করে থাকনে।
বন বিভাগ থেকে পাশ নিয়ে নিদিষ্ট সময়ে কেওড়া ফল সংগ্রহ করে বিক্রী করতে হয়। কিন্ত অনেকে চুরি করে কম বয়স্ক কেওড়া ফল নামিয়ে বিক্রী করে থাকেন। কেওড়া ফল বিক্রী করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
কেওড়া গাছ ও ফলের অনকে ঔষধিগুণ রয়েছে। এ গাছে ফাল্গুন মাসের শেষে ফুল হয়। ফুল থেকে মধু আহরণ করে মেীমাছি । ফ্লাগুনে ফুল ফোটে ও চৈত্র-বৈশাখে ফল ধরে এবং আষাঢ়-শ্রাবণ ও ভাদ্র-আশ্বিন মাস র্পযন্ত ফল পাওয়া যায়। কেওড়া ফল কিছুটা আমলকির মতো দেখতে। কেওড়া ফলে আছে প্রচুর ভিটামনি ‘সি। যা মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। কেওড়া ফল রক্তে কোলস্টেরেল কমায়। কেওড়া ফল শরীরে র্চবি কমায়। এতে কিছু এনজাইম আছে। যা শরীরে হজমশক্তি বাড়ায়। এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও প্রচুর। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি কমায়।
বহুগুণে সমুদ্ধ সুন্দরবনের কেওড়া ফল আজ শুধু সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় নয় এর প্রচার প্রসার দিনে দিনে সমগ্র বাংলাদেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ফলকে সংরক্ষণ করে কিভাবে সমৃদ্ধশালী করে স্বাস্থ্য সম্মতভাবে বাজারজাত করা যেতে পারে সে বিষয়ে অভিজ্ঞমহল যথযথ কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানিয়েছেন।
যাযাদি/ এসএম