ঈশ্বরদী ভাড়াবাসা থেকে আর এনপিপি দোভাষীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার
প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২০:০৫
পাবনার ঈশ্বরদীতে ভাড়া বাসার ডাইনিং রুমের সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় গামছা পেচানো অবস্থায় রহস্যজনক ভাবে ঝুলানো মো. আকমল হোসেন (৫২) নামের আরএনপিপি’র এক দোভাষীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রবিবার (১৭ নভেম্বর) সকালে সাড়ে ১০টায় শহরের দড়িনারিচা থানাপাড়া আবদুল্লাহ আল মামুনের বাড়ির দ্বিতীয় তালা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত আকমল ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিলেন।
নিহত আকমল হোসেন ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার পালিগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফ এর ছেলে । তিনি রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ইএসকেএম কোম্পানিতে দোভাষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আকমলের সহকর্মী তামিম বলেন, সকাল ৯ টার সময় অফিসের কাজের জন্য আকমল স্যারকে তার মোবাইলে কল দেই। স্যার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা শেষে তার ভুলত্রুটির ক্ষমা চেয়ে বলেন, আমার কিছু ভালো লাগছে না, আমি মনে হয় বাঁচবো না। কথা গুলো আমি স্যারের স্ত্রীকে জানাই। রাশিয়ানরা না থাকায় স্যারের স্ত্রী ছুটি নিয়ে বাসায় যেতে পারছিলেন না। তখন স্যারের স্ত্রী আমাকে বলেন তোমার পরিচিত কেউ থাকলে বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করো। তখন আমি সোহেলকে ফোন করে বাসায় যেতে বলি। পরে সোহেল সকাল ১০ টায় স্যারের বাসায় যায় এবং আমাকে ফোন করে বলে অনেক ধাক্কাধাক্কি করার পরেও স্যার দরজা খুলছেন না। তখন আমি সোহেলকে বলি স্যারের স্ত্রী বাসায় যাচ্ছে আপনি একটু অপেক্ষা করুন।
এসি ও ফ্রীজ মেকার সোহেল এবং মাসুম বলেন- আজ সকাল সাড়ে ৮টার সময় ইএসকেএম কোম্পানির সুপারভাইজার তামিম সোহেলকে ফোন করে বলেন আকমলের স্যারের একটু সমস্যা হয়েছে আপনি একটু তার বাসায় যান। তখন সোহেল তার নিজ বাসায় ঘুমিয়ে ছিল। ফলে সে সকাল ১০ টার দিকে আকমল সাহেবের বাসায় পৌঁছায় এবং বাড়িওয়ালার থেকে কেচিগেটের চাবি নিয়ে উপরে যান। বেশ কিচ্ছুক্ষণ দরজা ধাক্কাধাক্কি করার পরেও দরজা না খুললে তারা তামিম সাহেবকে ফোন দিয়ে জানান যে দরজা খুলছে না। তখন তামিম সাহেব ফোনে তাদের বলেন, আপনারা একটু অপেক্ষা করুন আকমল স্যারের স্ত্রী বাসায় যাচ্ছে।
বাড়ি মালিকের স্ত্রী জানান, আজ সকাল সাড়ে ৬টার সময় বাড়ির মেইন গেট খোলার শব্দ পাই, পরে সাড়ে ৯ টার সময় ধুপ করে কোন কিছু পড়ার শব্দ পাই। উনি মদপান করে মাঝেমাঝেই স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে আসবাবপত্র ভাংচুর করতেন। এজন্য আমি কোন গুরুত্ব দেইনি। পরে সকাল আনুমানিক ১০ টার সময় সোহেল এবং মাসুম নামে দুজন ব্যক্তি এসে বললো, উপরে সমস্যা হয়েছে, কেচিগেটের চাবি দেন। পরে তারা কেচি গেট খুলে উপরে যায়। ২ মিনিট পরে নিচে নেমে এসে মাসুম নামের ছেলেটি কাপতে কাপতে বলে- উপরে মরে পড়ে আছে। তখন আমি বলি - পুলিশে ফোন দাও, উত্তরে তারা বলে- আমাদের কাছে পুলিশের নম্বর নাই। তখন আমি নিজেই পুলিশকে ফোন দিই।
তৃতীয় স্ত্রী শবনম মুশতারী স্বর্ণা বলেন, সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬ টার সময় আমি কর্মস্থলে চলে যাই। পরে আমার স্বামীর সাথে বেশ কয়েকবার ফোনে কথা হয়। সে মদপান করেছিল এবং হতাশাগ্রস্থমূলক কথাবার্তা বলছিল। শেষে সকাল ৯ টা ২৩ মিনিটে আমাকে ফোন করে জানান, আমার এই জীবন ভালো লাগছে না, আমাকে সবাই ছেড়ে শুধু চলে যায়। আমি বাচতে চাই না। এই কথা শুনে আমি কোম্পানির ড্রাইভার কে নিয়ে দ্রুত বাসায় এসে দেখি ঘরের দরজা ভেড়ানো, জানালা গুলো খোলা এবং আমার স্বামী গলায় গামছা পেচানো অবস্থায় ড্রয়িং রুমের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে।
তিনি আরও বলেন, গতকাল রাতেও আমার স্বামী স্কিপিং রোপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তখন আমি তাকে বাধা দিলে সে বাহিরে গিয়ে মদ নিয়ে এসে আরও মদপান করে।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে তার মৃত্যুর কারন জানা যাবে।
যাযাদি/ এম