কালাইয়ে নবান্ন উপলক্ষে একদিনের মাছের মেলা জমজমাট
প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:১৯
ভোরের হালকা কুয়াশায় শীতের হিমহিম আমেজ। কালাই বাসস্ট্যান্ড থেকে পিচডালা পথে জয়পুরহাট-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক বরাবর আধা কিলোমিটার পূর্ব পাশে এগুতেই মানুষের হৈচৈ শোনা গেল। এটা পাঁচশিরা বাজারের মাছের আড়ত।
কিন্তু আজ রোববার এখানে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে বসেছে একদিনের মাছের মেলা।
একদিনের এই মাছের মেলায় বসেছে প্রায় ৬৫টি স্টল। সেই স্টলগুলোতে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে, রকমারি প্রজাতির মাছ। সিলভার কার্প, মিনারকার্প, কালবাউশ, ব্রিগেড, রুই, কাতলা, ব্লাডকার্প, গ্রাসকার্প, পাঙ্গাশসহ হরেক প্রজাতির মাছ। ব্যবসায়ীরা গ্রাহক আকৃষ্টের জন্য রংবেরঙের কাগজ আর বেলুন দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁদের স্টলগুলো। স্টলের সামনে সারি সারি সামনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বড়সড় মাছগুলো। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দোকানে দোকানৈ হাঁকডাক করেন বিক্রেতারা। ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে চলে দরকষাকষি। সামর্থের মধ্যে এলেই কেনা হয় পছন্দের মাছ।
মেলা উপলক্ষে পাঁচশিরা বাজারের আশপাশের গ্রাম-মহল্লায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বাবা মার বাড়িতে নাইওর এসেছেন মেয়ে ও জামাই। একই সাথে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে আত্মীয়-স্বজনকেও। এলাকাবাসী এই দিনটির জন্য পুরো বছর অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন।
মেলায় আঁওড়া মহল্লা থেকে সাত বছরের ছেলেকে মাছ কিনতে এসেছেন সোহেল জানান, মেলা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় ৩ কেজি ওজনের একটি কালবাউশ মাছ কিনেছেন তিনি।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা থেকে সপরিবারে মাছ কিনতে আশা কোরবান আলী জানান, পাঁচশিরা বাজারের একদিনের মাছের মেলার কথা জেলাবাসীর মুখে মুখে। পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছে পূরণ করতে সপরিবারে মাছের মেলায় এসে ৪৫০ টাকা কেজিতে ৪ কেজি ওজনের একটি ব্রিগেড মাছ কেনা হয়েছে। সুসজ্জিত মেলাটি দেখে বেশ ভালো লেগেছে।
কালাই পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক মোস্তা হাসান বলেন, 'কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা মাছের আড়ত ও মাছের বাজারের নামডাক এখন বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় দুই যুগ ধরে নিয়মিতভাবে একদিনের মাছের মেলা বসছে। মেলার উপলক্ষ নবান্ন উৎসব। মেলাটি এখন এ এলাকার ঐতিহ্যে বহন করছে। তাই এ দিন ভোর থেকে সারাদিন ধরে আশপাশের লোকজন মাছ কিনতে এ মেলায় ছুটে আসে।'
এই মেলার মাছ বিক্রেতা বিদ্যুৎ মিঞা বলেন, ' এ মেলায় এবার ছোট-বড় অন্তত ৫৫টি মাছের দোকান বসেছে। একদিনের এ মেলার জন্য আমরা নিজ জেলাসহ নিকটবর্তী জেলাগুলো থেকে নানা রকম ও জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করেছি। আজ সেগুলোই বিক্রি করছি। ৫-১১ কেজি ওজনের ব্রিগেড এবং সিলভার কার্প মাছ বিক্রি করছি ৪৫০-৫৫০ টাকা কেজিতে। ৬-১২ কেজি ওজনের রুই এবং কাতলা মাছ বিক্রি করছি ৫৫০-১০০০ টাকা কেজিতে। এছাড়াও ১-৪ কেজি ওজনের রুই, কাতলা, ব্রিগেড এবং সিলভার কার্প মাছ বিক্রি করছি ২৫০-৩৮০ টাকা কেজিতে।
কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন, ' কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজারের মাছের মেলায় এবারে অন্তত ৬০টি স্টল বসেছে। বেচাকেনা ভালো। মেলায় কোন ব্যবসায়ী যাতে বিষাযুক্ত মাছ বিক্রি করতে না পারে- সেদিকে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।
যাযাদি/এসএস