নাশকতা নয়, অদক্ষতাসহ ৩ কারণে দুই জাহাজে আগুন

প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১:৩২

চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি : যায়যায়দিন

কোনো রকম নাশকতা নয়, নাবিক ও বিএসসির দায়িত্বরত ব্যক্তিদের অদক্ষতা, অসতর্কতা ও অবহেলার কারণে আগুনে পুড়েছে জাহাজ।তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য।

গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) তদন্ত কমিটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নাবিক ও বিএসসির দায়িত্বরত ব্যক্তিদের অদক্ষতা, অসতর্কতা ও অবহেলার কারণে জাহাজে আগুন ধরেছে। এটা কোনো নাশকতা নয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ছিল ক্যাপ্টেন নিকোলাস জাহাজের নাবিকদের অসতর্কতা ও অবহেলা। সবার আগে এ জাহাজেই আগুন লেগেছিল। গভীর সাগরের কুতুবদিয়ায় এলপিজি সুফিয়া ও ক্যাপটেইন নিকোলাস পাশাপাশি একটি আরেকটির সঙ্গে রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। সামনের অংশে পাঁচটি ও পেছনের অংশে পাঁচটি রশি ছিল। হোস পাইপ দিয়ে নিকোলাস থেকে সুফিয়ায় এলপিজি স্থানান্তর করা হচ্ছিল। কিন্তু রাত ১২টা ১০ মিনিটে সামনের অংশের পাঁচটির মধ্যে একটি রশি প্রথমে ছিঁড়ে যায়। পরবর্তী ২০ মিনিটে বাকি চারটি রশি ছিঁড়ে যায়। এতে করে জাহাজ দুটি দূরে সরে যেতে থাকে। টান পড়ে হোস পাইপে। একপর্যায়ে হোস পাইপ ছিঁড়ে গিয়ে গ্যাস লিকেজ হতে শুরু করে। লিকেজ হওয়া এলপিজি গ্যাসে রূপান্তরিত হতে আরও প্রায় পাঁচ মিনিট সময় পায়। ১২টা ২৫ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়। তখন পেছনের দিকের পাঁচটি রশিতে আগুন লেগে সুফিয়ায় ছড়িয়ে যায়। আর হোস পাইপ থেকে আগুন ধরে যায় নিকোলাসে। সুফিয়ার নাবিকরা নিকোলাসের ক্যাপ্টেনকে দফায় দফায় জানানোর চেষ্টা করলেও তার সাড়া মেলেনি। ফলে আগুনের মাত্রা বেড়ে যায়। পরে নিকোলাসের আগুন নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দিয়ে নেভানো গেলেও সুফিয়া জাহাজে ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত আগুন জ্বলে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, এখানে জাহাজে কর্তব্যরতদের অসতর্কতা ছিল বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। যদি তারা রাত্রিকালীন ডিউটিতে আরও সজাগ ও সতর্ক থাকতেন, তাহলে এ ধরনের দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও এড়ানো যেত। তবে অগ্নিকাণ্ডে কারণ অনুসন্ধানে মানবসৃষ্ট কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। 

এর আগে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার) কমোডর এম ফজলার অন্য সদস্যদের নিয়ে কুতুবদিয়ায় পুড়ে যাওয়ায় ‘এলপিজি সোফিয়া’ জাহাজটি তিন দফা পরিদর্শন করেছেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বন্দরের উপ-সংরক্ষক ফরিদুল আলম, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, ডিজিএফআই, এনএসআই, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি ও কন্ট্রোলার অব মেরিটাইম এডুকেশনের ক্যাপ্টেন সাঈদ আহমেদ।

সূত্রে জানা যায়, মাদার ভেসেল নিকোলাস ওমান থেকে ৪২ হাজার ৯২৫ টন এলপিজি নিয়ে গত ৬ অক্টোবর কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় নোঙর করে। এর মধ্যে যমুনা এলপিজির ২০ হাজার টন, ইউনিট্যাক্সের ১০ হাজার, বগুড়ার টিএমএসএসের ৬ হাজার, এনার্জিপ্যাকের ৩ হাজার ৩০০ ও বিএম এনার্জির ৩ হাজার ৬২৫ টন এলপিজি ছিল। নিকোলাস জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজে করে আমদানিকারকরা গ্যাস নিয়ে যাচ্ছিলেন। শিপ টু শিপ ট্রান্সফার পদ্ধতির মাধ্যমে প্রথম চালানে মাদার ভেসেল থেকে একটি লাইটার জাহাজে করে প্রায় ৩ হাজার ২০০ টন গ্যাস নিয়ে গেছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান যমুনা গ্যাস। দ্বিতীয় চালানে ইউনিট্যাক্স এলপিজি লিমিটেডের ২ হাজার ৯০০ টন গ্যাস লাইটার জাহাজে স্থানান্তরের পর আগুনের সূত্রপাত হয়। বিদেশ থেকে আমদানি ও কাস্টমসের ভ্যাটসহ প্রতি কেজি এলপিজির দাম পড়ে ১০০ টাকা। সে হিসাবে ২ হাজার ৯০০ টন (২৬ লাখ ৩০ হাজার ৮৩৬ কেজি) এলপিজির দাম ২৯ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, গত ১২ অক্টোবর মধ্যরাতে বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার কুতুবদিয়া অংশে আমদানি করা এলপিজি বহনকারী বিদেশি মাদার ভ্যাসেল এমভি নিকোলাস ও বাংলাদেশি মালিকানাধীন লাইটার জাহাজ সোফিয়ায় আগুন লাগে। নৌ বাহিনীর ৫টি জাহাজের দুদিন সময় লেগেছিল এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে। প্রাথমিকভাবে দুটি জাহাজে আগুনের কারণ হিসেবে নাশকতা বলে সন্দেহ করা হলেও চট্টগ্রাম বন্দরের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য।

এর আগে, ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে তেল খালাসের সময় বাংলার সৌরভ এবং তার আগে ৩০ সেপ্টেম্বর ডলফিন জেটিতে বাংলার জ্যোতি নামে দুটি জাহাজ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে চারটি তেল ও এলপিজি বহনকারী জাহাজে আগুন লাগার ঘটনায় নাশকতার আশংকাটি সামনে আসে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলার জ্যোতি ও বাংলার সৌরভে নাশকতার কোনো প্রমাণ মেলেনি।

যাযাদি/ এআর