বাজারমূল্যে যখন সাধারণ মানুষের হাঁশপাশ অবস্থা তখন ক্ষুদে উৎপাদক কৃষকের কাছ থেকে যেন সরাসরি ক্রেতা সাধারণের কাছে শাক-সবজিসহ কৃষিপণ্য পৌঁছায় সে উদ্দেশ্য নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে উদ্বোধন হলো "কৃষকের বাজার"।
পিঁয়াজ-মরিচ-সবজী-মাছ-মাংসসহ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচাপণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রির উদ্দেশ্যে এই কৃষক বাজার চালু করা হয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তারা। আপাতত এই বাজার পরীক্ষামূলকভাবে শুক্র ও শনিবার সপ্তাহে এই দুই দিন করে চলবে, তবে সাধারণ মানুষ চাইলে জেলা প্রশাসন সপ্তাহে ৭ দিনই চালানোর উদ্যোগ নেবে বলে জানানো হয়েছে।
১ নভেম্বর থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই বাজারকে পরিবেশ দুষণ মুক্ত রাখার জন্য পলিথিন বাদ দিয়ে পাট ও পরিবেশবান্ধব ব্যাগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাজারে দরিদ্র ও দুঃস্থদের জন্য 'মানবতার সওদাপাতি' নামের স্টল খোলা হয়েছে যার উদ্দেশ্য স্বচ্ছল ক্রেতারা তাদের বাজার থেকে কিছু পণ্য স্বেচ্ছায় এখানে দান করলে সেটা বিনামূল্যে পাবেন দুঃস্থ প্রতিবন্ধী ও অসহায়রা।
বাজার পাহাড়াসহ মনিটরিং এ যুক্ত আছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঠাকুরগাঁও ইউনিট।
বাজার করতে এসে শহরের আশ্রমপাড়ার পারভেজ জানালেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌড়াত্ম না থাকায় বাজারে পণ্যমূল্য তারা কিছুটা শস্তা পাচ্ছেন। আরেকজন ক্রেতা হাজীপাড়ার রোমেল জানান, বাজারে আলু,মূলা,পিঁয়াজ, ফুলকপি, কাচা মরিচ বাজারের তুলনায় কিছুটা কম দামে পেয়েছি। তবে শাহ পাড়ার আলমগীর, সরকার পাড়ার সাবরিনা জানালেন, কিছু সবজির দাম বাজারের সমানও আছে। তবে টাটকা হওয়ায় আমরা সেগুলো কিনলাম।
কহর পাড়ার ক্ষুদ্র সবজি চাষি কালাম এসেছেন তার ক্ষেতের সীম ও বরবটি বিক্রি করতে। তিনি জানালেন, আড়ৎদারি না থাকায় আমি যে দামে বিক্রি করছি সেটা আড়তের চাইতে তুলনামূলক লাভজনক হচ্ছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোজাম্মেল বললেন, এখানে পণ্যের তুলনায় ক্রেতা বেশি হওয়ায় আমরা দ্রুত বিক্রি করতে পারছি। আজ প্রথম দিনের বিক্রির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, মানুষের মধ্যে এ খবর ছড়ালে আরও ক্রেতা বিক্রেতা বাড়বে এ বাজারে, তখন আমরাও আরও বেশি পণ্য বিক্রি করে বেশি লাভবান হতে পারবো। গোয়াল পাড়ার স্কুল শিক্ষক মহসিন জানান, আমি নতুন ধরনের বাজারের মাইকিং শুনে দেখতে এলাম। নতুন ধারণায় আশাবাদী হলাম। এতে গ্রামের শাক-সবজী চাষিরা লাভবান হবেন, আমি নিজ গ্রামে গিয়ে এটা ক্ষুদ্র সবজি চাষিদের জানাবো।
বাজারের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও মনিটরিং করতে আসা ঠাকুরগাঁও সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন ফয়েজ বলেন, প্রথম দিনই বাজারের পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক। বেলা বাড়ার সাথে সাথেই জমজমাট হয়ে উঠছে কৃষকের বাজার। সেনাবাহিনী এ উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। সিভিল প্রশাসনের কাধে কাধ মিলিয়ে সেনাবাহিনী এখানে সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত আছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফারজানা ও রকিবুল বলেন, বাজারের প্রচলিত দ্রব্যমূল্য সিন্ডিকেট ভেঙ্গে কৃষকরা যাতে উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন এবং সাধারণ জনগণ যেন তুলনামূলক কম দামে সরাসরি কৃষকের কাছে শাক-সবজীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যটি কিনতে পারেন সেজন্যই এ উদ্যোগ। পরিবেশকে ঠিক রাখবার জন্য এই বাজারে পলিথিন বাদ দিয়ে পাটের ব্যাগ ও পচনশীল ভুট্টার আঁশ দিয়ে তৈরি ব্যাগ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
শুক্রবার সকালে এই বাজারের উদ্বোধন করেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা। তিনি বাজার ঘুরে দেখেন,ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে বাজার নিয়ে সুবিধা-অসুবিধা শুনতে চান এবং বাজারের উদ্দেশ্য লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেন সাংবাদিকদের সাথে। তিনি বলেন, গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বাজারে বিক্রির সুযোগ করে দেয়া এবং ক্রেতা সাধারণ যেন প্রচলিত বাজারের চাইতে কম মূল্যে টাটকা শাক-সবজী পান সে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই এ বাজারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
যাযাদি/এসএস