শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

পরকীয়ার জেরে দুই শিশুকে হত্যা 

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৩৯
ছবি : যায়যায়দিন

পরকীয়ার জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গৃহবধূ শারমীন আক্তার-(২৪) তার দুই শিশু কন্যা রওজা-(৫) ও নওরিন-(৩) কে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শারমীনের পরিবারের সদস্যরা।

গত বুধবার তাদের লাশ উদ্ধারের পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। শারমীনের পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।

পরকীয়ার জেরে এই হত্যাকান্ড ঘটনো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে স্বামীসহ পরিবারের লোকজন পালিয়ে যাওয়ায় তাদের কাছে আরো বেশি সন্দেহ মনে হচ্ছে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, শারমীনের স্বামী আশরাফ আলী পরকীয়ায় আসক্ত। একই সাথে নেশায় ডুবে থাকতেন। এসব বিষয় নিয়ে পরিবারে বিবাদ লেগেই থাকতো। বিয়ের দুই বছরের মাথায় শারমীন চলে যায় বাপের বাড়ি। গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে তাকে আবার স্বামীর বাড়িতে দেয়া হয়।

তবে সুখ ধরা দেয়নি শারমীনের কপালে। গত বুধবার সকালে দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন শারমীন আক্তার।

পুুলিশ, শারমীনের পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ৮ বছর আগে জেলার বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের কদু মিয়ার মেয়ে শারমীনের সাথে বিয়ে হয় সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের ঘাটুরা গ্রামের সরকার বাড়ির মারাজ মিয়ার ছেলে আশরাফ আলীর।

আশরাফ বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের একজন কর্মচারি। নেশাসক্ত হওয়ায় আশরাফের সাথে প্রায়ই শারমীনের বিবাদ হতো। সংসার চালানোর খরচ নিয়েও তাদের মধ্যে বিরোধ হতো প্রায়ই। বুধবার বেলা ১১টার দিকে শারমীন ও তার দুই সন্তানকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দুই শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণ পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শারমীন।

স্থানীয় বাসিন্দা মুজাহিদ সরকার ও রাসেল সরকার জানান, পারিবারিক সমস্যা থাকলে ওই নারী সমাজের লোকজনকে না জানিয়ে যেটা করেছেন সেটা মর্মান্তিক। এমন ঘটনায় তারা শোক প্রকাশ করেন। ঘটনার পর থেকে শারমীনের স্বামীসহ অন্য স্বজনরা পালিয়ে গেছে।

শারমীনের মা রেজিয়া বেগম জানান, শারমীন কিছুদিন পরই বেড়াতে আসবে বলেছিলো। কিন্তু কি কারণে হঠাৎ করে কিভাবে কি হয়েছে তা তিনি বলতে পারছেন না। তিনি ঘটনাটি রহস্যজনক দাবি করে সত্য উদঘাটনের মাধ্যমে কেউ দায়ী হলে বিচার দাবি করেন।

শারমীনের বাবা কদু মিয়ার অভিযোগ তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবেই স্বামী ও তার বাড়ির লোকজন এ ঘটনা ঘটায়। শারমীনকে হাসপাতালে দিয়ে তার স্বামী আশরাফ পালিয়ে যায় বলে তিনি অভিযোগ করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেন, বিয়ের দুই বছর পর্যন্ত তার মেয়ে স্বামীর ঘরে ভালোই ছিলো। এরপর থেকেই তাদের মধ্যে কলহ দেখা দেয়। আশরাফ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে বিরোধ বেড়ে যায়।

শারমীনের ফুফাতো ভাই মোঃ নাদিমুল ইসলামও এ ঘটনার জন্য আশরাফকে দায়ী করেন। ভাইয়ের বৌয়ের সাথে পরকীয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাÐ ঘটনো হয় বলে তিনি দাবি করেন। এ বিষয়ে তারা থানায় লিখিত অভিযোগ দিবেন বলে জানান।

শারমীনের ভগ্নিপতি মোঃ খসরু মিয়া জানান, বিয়ের দুই বছরের মাথায় স্বামীর সাথে শারমীনের সমস্যা দেখা দেয়। এরপর আশরাফের পরিবারের অনুরোধে গ্রামের লোকজনের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ায় শারমীনকে শশুর বাড়িতে দেয়া হয়। তবে পরকীয়া নিয়ে শারমীন ও আশরাফের বিরোধ দেখা দেয়। এরই জেরে তাদেরকে মেরে ফেলা হয়।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ তানভীর আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার ওই তিনজনের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। শারমীনের পরিবার থেকে কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে