নদী-হাওর খাল-বিল বেষ্টিত সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার প্রধান দুটি ফসল বোর ও আমন ধান। উপজেলায় ২০ হাজার হেক্টর বোরোধান ও সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করা হয়। কৃষির বৃহৎ একটি অংশ হেমন্তের সময়ও পানির নিছে থাকে। তবুও ধান চাষের পাশাপাশি মৌসুমি শাকসবজি চাষের সম্ভবনাও রয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার রানীগঞ্জ ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী এলাকায় সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতিবছরই শাকসবজি চাষাবাদ হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষাবাদ হয় পাইলগাঁও ইউনিয়নে।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি শীতকালীন শাকসবজি চাষাবাদের মৌসুমে উপজেলার ৪৫০ হেক্টর জমিতে আলু, শিম, টমেটো, মরিচ, ধনিয়া পাতা, লালশাক, মুলা, বেগুন সহ মৌসুমি শাকসবজি চাষাবাদ করা হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, এবার বন্যা এবং অতিবৃষ্টির কারণে আগাম মৌসুমি শাকসবজি চাষাবাদ করা সম্ভব হয়নি, এছাড়াও আমনধান কাটা শেষ হলেই তাঁরা শীতকালীন শাকসবজি চাষাবাদ করবেন।
হলদিপুর-চিলাউড়া ইউনিয়নের খাগাউড়া গ্রামের কৃষক তুফায়েল আহমদ বলেন, প্রতিবছরই প্রায় ২০ বিঘা জমিতে ধানের পাশাপাশি শাকসবজি চাষাবাদ করি, এরমধ্যে কাঁচা মরিচ, টমেটো, ধনিয়াপাতা ইত্যাদি ফসল চাষ করে লাভবান হয়েছি, শাকসবজি চাষাবাদ করে সচ্ছল ভাবে পরিবার নিয়ে সুখে আছি।
গোপরাপুর গ্রামের কৃষক কুরেশ মিয়া বলেন, ১০ বিঘা জমিতে এবার আলু চাষ করবো, ২ বিঘা জমি প্রস্তুত করে বীজ বপন করেছি, সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্চা করে চাষ করেছি, আশাবাদী ভালো ফলন পাবো। খাগাউড়া গ্রামের কৃষক কাজল মিয়া বলেন, এবারও আগাম লাউ চাষ করেছি, বিক্রি ভালো হয়েছে।
রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক আজির উদ্দিন বলেন, বারো মাসই শাকসবজি চাষ করি, বর্তমানে, পেয়াজ, কাঁচা মরিচ, কড়লা, শিম, লালশাক, লাউ, টমেটো চাষ করেছি, মৌসুমি শাকসবজি চাষাবাদ করেই পরিবার চলে। সুবর্ণকোনা গ্রামের কৃষক জন্মত আলী বলেন, প্রতিবছর টমেটো ও মিষ্টি কুমড়া চাষ করি, এবার বন্যা ও বৃষ্টির কারণে আগাম টমেটো চাষ করতে পারিনি, ৩বিঘা জমিতে এখন টমেটো লাগিয়েছি, ফলন ভালো হলে তিন থেকে চার লক্ষ টাকার টমেটো উৎপাদন হবে। পাইলগাঁও ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের কৃষক মহিম মিয়া বলেন, টমেটো বেশি চাষ করি, এখন ২বিঘা জমিতে শুধু টমেটো চাষ করেছি, আরও জমি আছে, মিষ্টি কুমড়া ও ধনিয়া পাতা চাষ করবো।
জগন্নাথপুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সুমন চন্দ্র দাস বলেন, শীতকালীন সবজি চাষে এলাকায় গিয়ে সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্চা বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, এলাকার কৃষি জমির পরিমাণ বাড়ছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কাওসার আহমেদ বলেন, আমরা সবজি চাষে কৃষকদের অনুপ্রানিত করছি, রবি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষাবাদ হয়। জগন্নাথপুর উপজেলা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এলাকা, হটাৎ বন্যা বৃষ্টি কৃষিকে বাঁধাগ্রস্ত করে। তবুও শীতকালীন শাকসবজি চাষাবাদে অধিক সম্ভবনা রয়েছে। চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনাবাদি জমির পরিমাণ কমছে। শুধু সবজির বীজ দিয়ে আমাদের প্রণোদনা নেই, প্রণোদনা আসে, সরিষা, গম, ভুট্টা, সূর্যমুখী ইত্যাদিতে। জগন্নাথপুর উপজেলায় মিরপুর, পাটলী ও রানীগঞ্জ ইউনিয়নে এবার প্রথম বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে, প্রায় দুই হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে, নতুন প্রযুক্তি হিসেবে প্রতিটি পরিবারের চাহিদা মেটাতে বস্তায় আদা সহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষাবাদ করা যেতে পাড়ে।
যাযাদি/ এসএম