বানিয়াচং উপজেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারের ফলে জনসাধারণের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
উপজেলা সদরের বড় বাজার, গ্যানিংগঞ্জ বাজার, আদর্শ বাজার, বাবুর বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন দোকানগুলোতে আগের মতোই চলছে পলিথিনের ব্যবহার। ক্রেতারা মাছ, মাংস, সবজি, চাল, ডাল, কিংবা অন্য যেকোনো পণ্য কিনলেই পলিথিন ব্যাগে ভরে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা।
নিষিদ্ধ হওয়ার পর পলিথিনের দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীরা সেই টাকাও তুলে নিচ্ছেন পণ্যের দামের সাথে।
২০০২ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পলিথিন ব্যাগ বিক্রয়, প্রদর্শন, মজুদ ও বাণিজ্যিকভাবে বিতরণ করা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত) অনুযায়ী যে কেউ অমান্য করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। আর বাজারজাত করলে ৬ মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
পরিবেশ সুরক্ষা ও জনসাধারণ পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য উক্ত আইন বাস্তবায়ন করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। তারপর ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারগুলোতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পাশাপাশি পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, মজুদ, পরিবহন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে বাজারগুলোতে পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়ার ১৩ দিন অতিবাহিত হলেও প্রকাশ্যে পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার চলমান রয়েছে। এ আইন বাস্তবায়ন করতে নেওয়া হচ্ছেনা কোনো পদক্ষেপ।
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিজ্ঞান বলছে, পলিথিন মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করলে তাতে এক ধরণের ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত পচনে সহায়তা করে। অন্যদিকে, উজ্জ্বল রঙের পলিথিনে রয়েছে সীসা ও ক্যাডমিয়াম, যার সংস্পর্শে শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত ও চর্মপ্রদাহের সৃষ্টি হয়।
পলিথিন অপচনশীল পদার্থ হওয়ায় দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থেকে মাটিতে সূর্যালোক, পানি ও অন্যান্য উপাদান প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। পচনশীল না হওয়ায় মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায় ও উপকারী ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে বাধা তৈরি করে। মাটিকে উত্তপ্ত করা ও গাছের মূল মাটির গভীরে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে পলিথিন। পুকুরের তলদেশে জমে থাকা পলিথিন মাছ ও জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব সঙ্কট সৃষ্টি করে।
উপজেলা সদরস্থ বিভিন্ন বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, দুই যুগ পূর্বে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও এর বাস্তবায়ন না হওয়ায় পলিথিন ব্যবহারে মানুষ দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বাসা থেকে কোনো ধরণের ব্যাগ না নিয়েই বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করতে আসে ক্রেতারা। তাদের চাহিদা পণ্য পলিথিন ব্যাগে ভরে না দিলে নাখোশ হয়ে যে দোকানে পলিথিনে ভরে পণ্য দিবে সেই দোকানে চলে যায়। ক্রেতারা বলে অন্য দোকানীরা পলিথিন ব্যাগ দেয় আপনারা কেন দিবেননা? পলিথিন কেন নিষিদ্ধ তা বুঝানোর পরও অনেক সময় বাকবিতন্ডায়ও লিপ্ত হতে হয়। নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার নাহলে আমাদের অনেক লাভ হবে কারণ প্রতিদিন তিন থেকে চারশ টাকার ব্যাগ লাগে। ব্যাগের দামও আগের চেয়ে বাড়ছে। এটি ব্যবহারে আমাদের ব্যবসারও ক্ষতি হচ্ছে। সবাই সচেতন ও কঠোর হলে একসময় পলিথিন ব্যবহার রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন বিক্রেতারা।
বাজারে আসা কয়েকজন ক্রেতার সাথে আলাপ করে জানা যায়, বাসা থেকে বাজারে খালি হাতে আসা অভ্যস্থ হয়ে গেছে। কারণ বাজারে যেকোনো পণ্য ক্রয় করলে এখন দোকানিরা সুন্দর করে পলিথিন ব্যাগে ভরে হাতে ধরিয়ে দেন। তাহলে আমরা বাসা থেকে কেন ব্যাগ নিয়ে আসব? একসময় ছিল মানুষ মাছ কিনতে বাঁশের তৈরি ঝুড়ি; চাল, ডাল, তরকারিসহ অন্যান্য পণ্য কিনতে পাটের বস্তা বা কাপড়ের তৈরি ব্যাগ নিয়ে আসত। এখন আর এসব চোখে পড়েনা। কারণ বাজারে পলিথিন ব্যাগের ছয়লাপ।
এদিকে, বাজারে পলিথিন বিক্রেতাদের সাথে কথা হলে তারা জানান, নিষিদ্ধ হওয়ার পর আমরা পলিথিন বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। অথচ তাদের পরিচিত দোকানদারদের কাছে ঠিকই বিক্রি করছেন।
এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিকদের সাথে কথা হলে বলেন, ‘পলিথিন ব্যাগ বাজারে অনেক আগেই নিষিদ্ধ হয়েছিল। পলিথিনের বিকল্প যেকোন ধরণের ব্যাগ (বাঁশ,পাট ও কাপড় দিয়ে তৈরি) ব্যবস্থা ও প্রসাশন কঠোর হলে অবশ্যই নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার থেকে মুক্তি পাব এবং স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারব।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, ‘পলিথিন ব্যাগ বিক্রি ও ব্যবহার দন্ডনীয় অপরাধ। এটা রোধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত আছে।
যাযাদি/এসএস