মিঠাপুকুরে প্রতারণা করে তরুণীকে দ্বিতীয় বিয়ে করার অভিযোগ
প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:০৭
রংপুরের মিঠাপুকুরে ইঞ্জিনিয়ার পরিচয়ে তথ্য গোপন করে প্রথম স্ত্রীকে তালাক না দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার পর বিষয়টি জানাজানি হলে সংসার করতে না চাওয়ায় তরুণীর পরিবারকে মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে আবদুল্লাহ আল সুমন নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে।
প্রতারণার শিকার ওই তরুণী জানান, রংপুর সদর থানাধীন পালিচড়া বালাপাড়া গ্রামের মৃত-ইলাহী বকসের পুত্র আবদুল্লাহ আল সুমন (২৮) তাকে পারিবারিক ভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এসময় সুমন নিজেকে ওই নারীর পরিবারের কাছে দেশের একটি শীর্ষ স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছে বলে নিজেকে পরিচয় দেন। সুমন তার তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তরুণী সুফিয়া আক্তারের পরিবারকে রংপুরে তার ভাড়া বাসার ঠিকানা দেয় এবং তার কথিত বন্ধদের শিখিয়ে দেয় সে অবিবাহিত এবং সে একজন ইঞ্জিনিয়ার।
রংপুরে ভাড়া বাসায় সুফিয়া আক্তারের বাবা সফিকুল ইসলাম এবং তার স্বজনরা গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সুমন একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং সুমনের বন্ধুরা জানায় সুমনের সঙ্গে সুফিয়ার বিয়ে দেওয়া ভালো হবে। এরপর পারিবারিকভাবে উভয়ের সম্মতিতে গত- ৮ সেপ্টেম্বর সুমনের সঙ্গে সুফিয়ার ধুমধাম করে বিয়ে হয়।বিয়েতে প্রায় বরপক্ষের দুই শতাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বিয়ের রাতে সুফিয়া আক্তার তার স্বামীর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন,সুমনের পূর্বের স্ত্রী রয়েছে। সুমন তার প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে তথ্য গোপন করে তাঁকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে।
একপর্যায়ে সুফিয়া সংসার না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তার বাবার বাড়ি মিঠাপুকুরের ০২ নং রানীপুকুর ইউনিয়নের জুম্মা খাঁন পাড়ায় চলে আসলে সুমন জানায়, সে তার সঙ্গে সংসার করবে,প্রয়োজনে সুফিয়াকে ভবিষ্যতে কখনো না ছাড়ার শর্তে দ্বিতীয়বার নতুন করে কাবিননামা করবে। বাঙালি মেয়েদের বিবাহ্ একবারে হয়,যা হবার তা হয়েছে এমন নানাবিধ কথা বলে সুফিয়ার পরিবার অধিক কাবিননামার প্রস্তাবে রাজি হয়ে সুফিয়াকে স্বামী সুমনের সংসার করার প্রস্তাব দেয় এবং সুমন গত- ২৬ অক্টোবর পূনরায় ১৬ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য করে তার ভগ্নিপতিকে স্বাক্ষী রেখে দ্বিতীয়বার কাবিননামায় স্বাক্ষর করেন।
দ্বিতীয়বার কাবিননামা করে সুফিয়া আক্তারকে তার স্বামী সুমন তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর সুমনের প্রথম স্ত্রী সহ সুমন এবং তার পরিবার সুফিয়ার উপর অমানবিক অত্যাচার শুরু করে দেয় এবং সুফিয়াকে তার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের ২০,লক্ষ টাকার জন্য চাপ দেয়। সুফিয়া যৌতুকের টাকার চাপ সহ্য করতে না পেরে কৌশলে বাপের বাড়ি চলে আসে। সুফিয়া নির্যাতনের ভয়ে সুমনের বাড়ি যেতে না চাইলে সুমন হুমকি ধামকি দিয়ে বলে সংসার না করলে সে থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে।
এরই জের ধরে সুমন মিঠাপুকুর থানায় ৮ জনকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগে সুমন দাবি করেন, সুফিয়া শারীরিক ভাবে যৌনমিলনে অক্ষম এবং বিয়ের পর তাকে একদিনের জন্য শরীর স্পর্শ করতে দেননি। বিবাহ রেজিস্ট্রার মোঃ মশিউর রহমান জানান, তারা আমাকে জানায় তারা উভয় পরিবারের সম্মতিতে দ্বিতীয়বার সংশোধনী কাবিননামা করবে। কিন্তু এখন শুনছি ছেলে আমাকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দিয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, মেয়েটার সঙ্গে প্রতারণা করে সুমন তাকে বিয়ে করেছে। মেয়েটা যখন সংসার করতে চায়নি তখন সুমন দ্বিতীয়বার নতুন করে কাবিননামা করে, কিন্তু যখন তার পরেও মেয়েটা সংসার করতে চাচ্ছেনা তখন সে বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছে। অভিযুক্ত সুমন জানায়, আমাকে তাদের বাড়িতে ডেকে জোরপূর্বক অতিরিক্ত টাকা বসিয়ে দ্বিতীয়বার কাবিননামা করেছে। তার দাবি, প্রথম বিয়ের কথা জানিয়ে সে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে।
মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
যাযাদি/এসএস