মৌলভীবাজার শহরের আদালত সড়কের জজ কোর্টের বিপরীতে দীর্ঘদিন যাবৎ বেদখলে থাকা জেলা প্রশাসনের ভূমি থেকে নিজেদের স্থাপনা অপসারণ করতে আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছে। গেল ১৫ মে তারিখে সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক’র (রাজস্ব) স্বাক্ষরিত একটি স্মারকে দেওয়া নোটিশ অমান্য করে এখনো আধাপাকা স্থাপনায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন দখলদারেরা। কোন জোরে তারা জমি ছাড়ছেন না এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বমহলে। এদিকে শহরের সবচেয়ে ব্যস্থতম সড়কের ওই জায়গা কয়েক যুগ যাবৎ বেদখলে থাকায় প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই আছে। এতে ধায়সাড়া কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ভূমি অফিসের দুটি স্মারকের মুলে প্রেরিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নিশ্চিত হয়েছেন যে, মৌলভীবাজার সদর উপজেলাধীন ১০৫ নং জেএলস্থিত মৌলভীবাজার মিউনিসিপ্যালিটি মৌজার ৭৮২৩, ৭৮২৪, ৬৮২৫, ৭৮২৬, ৭৮২৭, ৭৮২৮, ৭৮২৯, ৭৮৩০, ৭৮৩১, ৭৮৩২, ৭৮৩৩, ৭৮৩৪, ৭৮৩৫, ৭৮৩৬ এই ১৪টি দাগের ৯.৮৪ শতক ভূমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন ১৮ ব্যক্তি।
সংশ্লিষ্ট কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ভুমি ও ইমারত (দখল ও পুনরুদ্ধার) অধ্যাদেশ, ১৯৭০ এর ৫ (১) ধারা এবং তৎসহ পিও ৮৫/৭২ অনুযায়ী নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে এই তফসিল বর্ণিত ভূমি হতে স্থাপনা অপসারণপূর্বক অবৈধ দখল ত্যাগ করার জন্য অবৈধ দখলদারদেও অনুরোধ করা হয়। গেল ১৫ মে সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আব্দুল হক স্বাক্ষরিত একটি স্মারকে তিনি উল্লেখ করেন, উল্লেখিত সময়ের মধ্যে যদি আপনার বর্ণিত ভূমির অবৈধ দখল ত্যাগ এবং স্থাপনা অপসারণ করতে সক্ষম না হন তবে, জেলা প্রশাসক, মৌলভীবাজার কর্তৃক নিয়োজিত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট’র উপস্থিতিতে ভূমি হতে বেদখলকারীদের উচ্ছেদক্রমে তা সকারের খাস দখলে আনা হবে।
অবৈধ দখল অপসারণের নোটিশ প্রাপ্তরা হলেন-তোফাজ্জল হোসেন মনির,আলাল মিয়া,মফিজ মিয়া,মুজিবুল হক,মো ইসমাইল হোসেন, চন্দন মালাকার,রাজু মালাকার,মো ময়নুল ইসলাম,রহমান আহমদ, রকিব হোসেন,দুলন বৈদ্য,সৈয়দ ফারুক আহমদ,আরিফুর রহমান তুহিন, আজম রহমান, হাবিবুর রহমান, মানিক মিয়া, মো জিতু মিয়া, শিবু চন্দ। এদিকে নোটিশ প্রদানের প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হলেও সড়কে যত্রতত্র যানঝট লাগিয়ে দখলদারগণ অনাহাসে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এতে ক্ষোপ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
গেল রোববার (১০ নভেম্বর) জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ অবৈধ স্থাপনাগুলো দ্রুত অপসারণ করতে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানান বক্তারা।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শহরের সবচেয়ে ব্যবস্থতম এলাকার এ জমির মূল্য আকাশসম। তারা জানিয়েছেন, প্রতি শতক জমি সর্বনিম্ন ১৫ লাখ টাকা ধরা হলে ৯.৮৪ শতকের দাম পড়ে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এদিকে বেদখল ছেড়ে কেন যাচ্ছেন না এমনটা জানতে চাইলে অত্র দাগের রাকিব স্টোর’র সত্বাধীকারী মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, এই ভূমি আমার অনেক আগের কাগজ করা। বহু আগে বিনিময়ের মাধ্যমে পেয়েছি। তিনি বলেন, এখানকার ৫টি কক্ষের ভূমি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে।
অপর দখলদার সমুজ আলীর ছেলে মোঃ ময়নুল ইসলাম বলেন, “জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অপসারণের নোটিশ পাবার পর আদালতে আমরা মামলা দায়ের করেছি।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সানজিদা আক্তার বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দখলদারদের উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েছিলেন। নোটিশে লেখা আছে, যদি তারা না যায়, তবে আমাদের জেলা প্রশাসনে প্রতিবেদন দেবার জন্য। পরে দেখলাম, তারা চলে যায় নাই। আমরা প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে নেয়া হবে।
মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোসা. শাহীনা আক্তার অপসারণের নোটিশের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এই নোটিশের বিপরীতে কোন মামলা আছে কিনা, আমি দেখে জানাতে পারবো’।
যাযাদি/ এসএম