হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ শহরের ব্যবসায়ী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ রিজভী আহমেদ খালেদ (৫০) ও আওয়ামী লীগ নেতা গৌরমনি সরকার (৫৫)কে আটক করে হেনস্তার পর পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে ছাত্রদল-যুবদলের একাংশের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ পন্থি বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
এদিকে নবীগঞ্জ উপজেলার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক দলের নেতাদের আটক করে হেনস্তা করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার ঘটনা নজিরবিহীন।
রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে ও সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ শহরের নতুন বাজার মোড়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের আটকের ঘটনা ঘটে।
আটককৃত শাহ রিজভী আহমেদ খালেদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুর্শি ইউনিয়নের কুর্শি গ্রামের শাহ মোছন আলীর ছেলে। এছাড়া খালেদ নবীগঞ্জ শহরের গোল্ডেন প্লাজা মার্কেটের আয়শা ভেরাইটিজ স্টোরের স্বত্তাধিকারী। অপর আটককৃত গৌরমনি সরকার পৌরসভার জয়নগর এলাকার ধরনি সরকারের ছেলে ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা।
স্থানীয়রা সূত্রে জানা যায়- রাজধানী ঢাকার নূর হোসেন চত্বরে আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচির ডাকে সারাদেশে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার ডাক দিয়ে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ শহরের নতুন বাজার মোড়ে রবিবার সকাল থেকে আলাদা আলাদা বলয়ের বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয় । নবীগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়কে পৃথক পৃথক ভাবে আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে নানা শ্লোগানে মিছিল ও শো-ডাউন দেয়া হয়। কিন্তু আওয়ামিলীগের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মসূচি মাঠে নামতে দেখা যায়নি।
রবিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ নেতা গৌরমনি সরকার (৫৫) নবীগঞ্জ শহরে নতুন বাজার এলাকায় আসলে নবীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মোশাহিদ আলম মুরাদের নেতৃত্বে বিশেষ গ্রামের কতিপয় কিছু যুবদল-ছাত্রদলের উচ্ছৃঙ্খল একটি অংশ গৌরমনিকে আটক করে। পরে গৌরমনি সরকারকে হেনস্তা করে নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নবীগঞ্জ শহরের গোল্ডেন প্লাজা মার্কেটের আয়শা ভেরাইটিজ স্টোরের স্বত্তাধিকারী শাহ রিজভী আহমেদ খালেদকে আটক করা হয়। পরে খালেদকেও হেনস্তা করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন যুবদল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। দুই নেতাকে আটকের পর হবিগঞ্জের রিপন শীলকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে খালেদ ও গৌরমনির সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে দাবী করে যুবদল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগ নেতাদের পরিবারের দাবী- খালেদ নবীগঞ্জ শহরের গোল্ডেন প্লাজাস্থ আয়শা ভেরাইটিজ স্টোর নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় তাকে আটক করা হয় এবং গৌরমনি নবীগঞ্জ বাজারে সবজি কিনতে আসলে তাকে আটক করা হয়। অপরদিকে যুবদল-ছাত্রদলের দাবী- পলাতক শেখ হাসিনার নির্দেশে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার চেষ্টাকালে সাধারণ জনগন ও ছাত্রজনতা আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
এদিকে এঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগ পন্থি নবীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এছাড়া অনেক আওয়ামী লীগ পন্থি ব্যবসায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী রেখে পালিয়ে গিয়েছেন। অন্যদিকে সুশীল সমাজের দাবী- বিগত সময়ে নবীগঞ্জ উপজেলায় সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান ছিল। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের আন্দোলনে আওয়ামীলীগ-বিএনপি ও ছাত্রজনতার আন্দোলনের মধ্যে কোনো ধরণের সহিংসতার ঘটনার ঘটেনি। বিএনপি নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের আমলে মিথ্যা মামলায় আসামী হলেও নবীগঞ্জ উপজেলার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক দলের নেতাদের আটক করে হেনস্তা করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার ঘটনা নজিরবিহীন। এ সব ঘটনার সৃষ্টি করেছেন শহরের পাশ্ববর্তী আনমনু গ্রামের কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদল ও যুবদল নামধারী নেতাকর্মীরা। ফলে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে নবীগঞ্জের রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন- আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে বিএনপি-যুবদলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আটক করে আমাদের কাছে সোপর্দ করে, আমরা প্রাথমিকভাবে তাদেরকে আটক করেছি।
যাযাদি/ এসএম